তিতলি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র প্রভাবে আজও (বৃহস্পতিবার) রাজধানীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কাক ডাকা ভোর থেকেই আকাশ মেঘলা দেখা যায়। সকাল ৭টার পর স্বল্প সময়ের জন্য হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। সাত সকালে বৃষ্টির কারণে কর্মজীবী নারী-পুরুষের পাশাপাশি স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছেন। পথচারী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ছাতা হাতে ও রেইনকোট গায়ে গন্তব্যে ছুটতে থাকে। অনেকের মাঝে প্রশ্ন ছিল ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাব কি রাজধানীত পড়বে? রাজধানীতে কি ভারি বৃষ্টিপাত হবে?

আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড় তিতলির সর্বশেষ অবস্থান জানিয়ে বলছে, হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র গোপালপুরের কাছ দিয়ে ভারতের ওড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। পরবর্তী ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে তা উপকূল অতিক্রম করবে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।

আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান সকাল সাড়ে ৮টায় বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ঘূর্ণিঝড় তিতলি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আতঙ্ক বা ভয়ের কোনো কারণ নেই। আজ ভোর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি গোপালপুরের কাছ দিয়ে ভারতের ওড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে আজসহ আাগামী ২-১ দিন সারাদেশে মেঘলা আবহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিতলির প্রভাব

বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় তিতলি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘোরাফেরা করা গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নিরাপত্তার জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তিতলির প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিও হচ্ছে।

jagonews

আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’আরও সামান্য উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি খুব শক্তিশালী ও প্রশস্ত। এটি বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। স্থলে উঠে আস্তে আস্তে এটার তীব্রতা কমে যাবে। এরপর এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে ওই প্রভাবটা আমরা পাব। আমরা অবশ্যই এখনই প্রভাব পাচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দমকা বাতাসও হচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র বিশাল ব্যাপ্তি থাকায় এটির মূল অংশ ভারতের উপকূলে আঘাত হানার সময় বাংলাদেশেও এর প্রভাবে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আরেকজন আবহাওয়াবিদ।

বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ

ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে সব প্রকার পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরের জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল। এ ছাড়া বৃষ্টিও থামছে না। এ অবস্থায় গভীর সাগরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করা নিরাপদ নয়। তাই বহির্নোঙরে সব ধরনের খোলা পণ্য খালাস বন্ধ আছে। তবে বন্দর জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরাতে মাইকিং

চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কায় নগরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার থেকে নগরে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বুধবার দুপুরেও নগরের মতিঝর্ণা, বাটালি হিল ও দক্ষিণ খুলশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৈরি আবহাওয়ার কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কেউ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।

এমইউ/এনডিএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।