ভাইদের ষড়যন্ত্রে অসহায় সাবেক যুগ্ম সচিবের পরিবার
আপন ভাইদের ষড়যন্ত্র ও নানা রকম হয়রানি-নির্যাতনে অসহায় জীবন-যাপন করছে সাবেক এক যুগ্ম সচিবের পরিবার। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব মো. আমজাদ আলী সরকারের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে তার দুই সন্তান ও বিধবা স্ত্রীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি মৃত্যুর আগে তার পেনশন ও পারিতোষিকের নমিনি হিসেবে স্ত্রীকে মনোনয়ন করে রাখলেও তাতে বাধ সেজেছেন তার ভাইয়েরা।
আমজাদ আলী সরকারের মেজভাই আজহার আলী সরকার, সেজ ভাই বিআরটিএ থেকে দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কার হওয়া আমিনুল হক সরকার এবং ছোট ভাই আলতাফ আলী সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্রাব) অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মৃত আমজাদ আলী সরকারের স্ত্রী মোসা. আমিনা পারভিন এবং দুই পুত্র মো. আশফাক আলী সরকার সাগর ও মো. আহসান আলী সরকার সৈকত।
সংবাদ সম্মেলনে আমিনা পারভিন অভিযোগ করেন, স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকেই তার স্বামীর ভাই-বোনরা সম্পত্তি ও টাকা-পয়সা আত্মসাতের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তিনি বলেন, স্বামীর মৃত্যুতে যখন আমি ও আমার সন্তানরা শোকে স্তব্ধ, যখন আমার স্বামীর দাফনও শেষ হয়নি ঠিক তখন আমার দেবর-ননদরা ব্যস্ত ছিল ঘর থেকে টাকা-পয়সা, বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল সরিয়ে ফেলার কাজে। স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পর প্রকাশ পেতে থাকে আমার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের হয়রানি ও নির্যাতন। স্বামীর পেনশন ও পারিতোষিক সুযোগ-সুবিধা পেতে তার মনোনীত নমিনি হিসেবে আমি যখন সচিবালয়ে যোগাযোগ শুরু করি ঠিক তখন তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আঁচ করতে পারি। সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী, স্বামীর পেনশনের অর্থ পাওয়ার সকল অধিকার থাকলেও তাতে বাধ সাধেন আমার শ্বশুর বাড়ির স্বজনরা। আমার সেজ দেবর আমিনুল হক সরকার তাদের জীবিত পিতা মো. আশরাফ আলী সরকারকে পেনশনের টাকার একমাত্র হকদার দাবি করে মন্ত্রণালয়ে একটি আপত্তিপত্র দাখিল করেন।
আমিনা পারভিন বলেন, স্বামীর পেনশন ও পারিতোষিকের অর্থ পেতে যখন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করি, তখন ওয়ারিশ সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান করেই আমাকে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এরপর আমি আমার শ্বশুর ও দেবর-ননদদের সঙ্গে কথা বললে তারা নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বামীর পেনশন থেকে আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। এই অর্থ পেলে তারা সকল আপত্তি তুলে নেবেন এবং আমার সন্তানদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বুঝিয়ে দেবেন বলে শর্ত দেন। আমি তাদের শর্তে রাজি হলে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সমঝোতাপত্রও উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে করা হয়। আর আমাকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়া ছাড়াও দিতে হয় ১০ লাখ টাকা করে চারটি চেক। শর্ত থাকে স্বামীর পেনশনের টাকা থেকে ধাপে ধাপে টাকা দিলেই তারা চেক ফেরত দেবে। আমি প্রথম কিস্তি পেনশনের অর্থ পাওয়া মাত্রই তাদের ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করি এবং সেই সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির বাকি শর্তগুলোও তাদের বাস্তবায়ন শুরু করতে বলি। কিন্তু তারা তাদের বাকি শর্ত না মেনে আমার বিরুদ্ধে দুটি চেক ডিজওনারের মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
তিনি বলেন, যখন এমন অবস্থায় জীবন-যাপন করছি, ঠিক তখনই আমার সেজ দেবর আমিনুল হক সরকারের দুর্নীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় খবর ছাপা হয়। এসব খবর ছাপা হওয়ার পেছনে আমার যোগসাজস আছে ধারণা করে তারা আমার উপর অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও জানান, বিগত এক-এগারোর সরকারের ট্রুথ কমিশনের কাছে নিজের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে সেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন আমিনুল হক সরকার। পরে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের এক আদেশে তিনি চাকরি ফিরে পেলেও নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের উপ-পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন।
আমিনা পারভিনের এমন অভিযোগের ব্যাপারে অভিযুক্ত আমিনুল হক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এমএআর/বিএ