ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়নি মন্ত্রিসভায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সম্পাদক পরিষদকে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা হয়নি। তবে আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এককভাবে কোনো একটা বিষয়ে আলোচনা করছিলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী জাগো নিউজকে বলেন, আজকের বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে উন্মুক্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তবে আইনমন্ত্রী একটি ফাইল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এককভাবে কী বিষয়ে যেনো কথা বলছিলেন।

এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নয়টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি বলে জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এসব ধারার বিষয়ে আলোচনার জন্য আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩- এ নয়টি ধারা নিয়ে মূলত আজকের (৩০ সেপ্টেম্বর) আলোচনা। অন্য ধারার বিষয়ে কারো বক্তব্য নেই। যেহেতু আইনটি ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে, যদিও এখনও রাষ্ট্রপতি আইনটিতে স্বাক্ষর করেননি; সেহেতু সম্পাদক পরিষদের কিছু আপত্তির বিষয়ে যেগুলো সংবাদপত্রে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে- সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা করবো। তবে আজকের (৩০ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে ২১ ধারাটা যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সেই দিন তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক রয়েছে। কিন্তু ওই বৈঠকে অনেক এজেন্ডা আছে। তাই হয়তো সেদিন এটা উপস্থাপন সম্ভব হবে না। কিন্তু এর পরে যে সভা হবে (আজকের সভায়) সেখানে বিষয়গুলো উপস্থান করব। সেখানে আলোচনার জন্য আমাদের যে টার্মস অব রেফারেন্স দেয়া হবে সে আলোকে আবার আলোচনায় বসা হবে। সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনায় বসতে হতে পারে।’

সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘এই আইনের বিষয়ে আমরা মনে করি, সংবিধানের দেয়া আমাদের ফান্ডামেন্টাল রাইটস, ফ্রিডম অব স্পিচ, ফ্রিডম অব প্রেস- এগুলো লঙ্ঘন করে। যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশের আদর্শের পরিপন্থী এ আইন। এই আইন গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থী। সাংবাদিকতার মূল ইথিকস বা যে পরিবেশে সাংবাদিকতা হতে পারে তার পরিপন্থী। আইনটির বিরুদ্ধে আমাদের এই চার বড় আপত্তি।’

৩০ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আবুয়াল হোসেন।

সম্পাদক পরিষদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম, যুগান্তরের সাইফুল আলম, নিউএজের নূরুল কবির, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউজ টুডের রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, কালের কণ্ঠের ইমদাদুল হক মিলন, ইন্ডিপেন্ডেন্টের মো. শামসুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নঈম নিজাম, ইনকিলাবের এ এম এম বাহাউদ্দিন, বণিক বার্তার দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান ও সমকালের মুস্তাফিজ শফি প্রমুখ।

একই দিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বৈঠক করে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করবে দাবি করে সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, আইনটি সংশোধন না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিক নেতারা এ কথা জানিয়েছিলেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতারা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলে আজ সোমবার স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর ফলে বিলটি আইনে পরিণত হলো।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আইনের আটটি ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের আপত্তির মধ্যেই জাতীয় সংসদে বিলটি পাস হয়।

এমইউএইচ/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।