মাদকমুক্ত সমাজ কী দিবাস্বপ্ন


প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৫

বাংলাদেশ মাদক নিয়ে উদ্বিগ্ন-পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমানের এই উক্তির সাথে দ্বিমত প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? মাদকমুক্ত একটি সুস্থ সমাজ আমরা কবে পাব?

কী গ্রাম কী শহর, বৃদ্ধ কী যুবক, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত মাদকের ব্যাপারে কোনো ভেদাভেদ নেই। এই সমস্যা যেন অক্টোপাসের মত ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশ কে। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে যেটি পুনর্বার উচ্চারিত হল পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন অফিসারের মুখে।

কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অন্যতম অনুঘটক হল সমস্যাটিকে প্রথমে স্বীকার করে নেওয়া। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সকলেই এখন মাদক সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এখন মাদকের করাল গ্রাস থেকে কিভাবে বাংলাদেশকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করা যায় সেটিই এখন সবচেয়ে ভাবনার বিষয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে মাদক কেনাবেচা হয় ৯৫টি স্থানে। এর মধ্যে কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তি, তেজগাঁও কলেজের সামনের পার্ক এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, সোয়ারীঘাট এলাকা, আগারগাঁও বিএনপি বস্তি, জেনেভা ক্যাম্প, মিল্লাত ক্যাম্প, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ, নীলক্ষেত বাবুপুড়া বস্তি এলাকা, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, ধানমন্ডি লেকপাড়, উত্তরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এলাকা, বাউনিয়া বাঁধ এলাকা, মেরুল-বাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্ট, বাড্ডার নতুন বাজার এলাকা, মুগদা বিশ্বরোড ও স্টেডিয়াম এলাকা, মুগদা ঝিলপাড় কবরস্থান এলাকা, উত্তর মুগদা রানীর রিকশার গ্যারেজ টিটিপাড়া বস্তি এবং গেন্ডারিয়া নামাপাড়া বস্তিতে বেশি ব্যবসা হয়।

ডিএমপি,র‌্যাব, সিআইডি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০১৪ সালে মোট ৭ হাজার ৬৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ চারটি সংস্থার অভিযানে মামলা হয়েছে ৯৩৭টি।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন অভিযানে যেসব মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবীরা আটক হন তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাসহ সমাজের ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে । এখন সর্ষের মধ্যে যদি ভূত থাকে তাহলে সেই ভূত তাড়ানো কোনো দিনই সম্ভব নয়। তাই সবার আগে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। অন্যায়কারীকে কোনোভাবেই ছাড়া যাবে না। যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবেন আইনের আওতায় আনতে হবে তাদেরও।

মাদকের কুফল সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। মাদকসেবী থেকে শুরু করে এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হন সংশ্লিষ্ট সকলেই। যে পরিবারে একজন মাদকসেবী রয়েছে সেই পরিবারের ওপর নেমে আসে এক দুঃসহ যন্ত্রণার ভার। পারিবারিক বন্ধনকেও ছিন্ন করে দেয় মাদক। এরফলে সামাজিক শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। চুরি, ডাকাতি ছিনতাই এমন কোনো অপরাধ নেই যা মাদক সেবীরা করে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্যও মাদক সমস্যা অনেকাংশে দায়ী। কাজেই মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা বন্ধ করতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালান যাতে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারেও রাখতে হবে কড়া নজরদারি। সামাজিক সচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই এক্ষেত্রে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।