ডাক্তারদের ব্যবহারে রোগী যেন অর্ধেক ভালো হয় : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৮
ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য চিকিৎসাসেবাসহ প্রতিটি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে; সে লক্ষ্য নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে নতুন নতুন চিকিৎসা চলে এসেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের গড়ে তুলতে হবে। আর ডাক্তারদের ব্যবহারে রোগী যেন অর্ধেক ভালো হয় সেভাবে রোগীকে দেখতে হবে।

রোববার বিকেলে গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল সম্মেলন ২০১৮ ও বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় পায়রা উড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি, কিন্তু সেখানে আমরা ডাক্তার পাই না। নিয়োগও আমরা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কেন এই অবহেলা মানুষের প্রতি। এটা নিশ্চিয়ই মানুষ আশা করে না। সেটা আমি আপনাদের ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করবো। তবে একটা অসুবিধা আছে জানি- সেটা হলো থাকার অসুবিধা। এ ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতি উপজেলায় আমরা বহুতল ফ্ল্যাট করে দেব। সেখানে ডাক্তাররা ভাড়া থাকবেন। ইতোমধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় ওয়েব ক্যামেরা চালু করা হয়েছে। জনগণ এর মাধ্যমে যাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ পেতে পারে তার ব্যবস্থা আমরা করেছি।

মানুষের সেবা করাটা সর্বপ্রথম কতর্ব্য উল্লেখ করে চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবাটা নিশ্চিত করতে হবে। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন বলে আমি আশা করি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজকে উন্নতমানের হাসপাতাল হিসেবে নতুন করে নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে শত বছরের পুরনো বিল্ডিং, কেউ কেউ এটাকে হেরিটেজ বলেন। কিন্তু হেরিটেজ মাথায় ভেঙে পড়লে কী হবে সেটা আর কেউভাবে না। আমি নতুন প্ল্যান তৈরি করেছি। অত্যন্ত আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল আমরা নির্মাণ করে দেব। ইতোমধ্যে আমরা শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। নতুন হাসপাতাল হলে এই শয্যা সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ১০ বছর পার করছি। এর আগে ছিলাম ৫ বছর। বাংলাদেশের মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্ষমতাকে আমরা হাতে নিয়েছি এই চিন্তা থেকে যে, জনগণের সেবা করা আমার কর্তব্য, আমার দায়িত্ব। নিজেরা কী পেলাম, না পেলাম সে চিন্তা করি না। চিন্তা একটাই মানুষকে কতটুকু দিতে পারলাম।

চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের উন্নত প্রশিক্ষণের গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণটা একান্তভাবে প্রয়োজন। মানুষকে ভালোভাবে ট্রেনিং দিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফলাফলে দেখলাম মেয়েরা ভালো করেছে। ছেলেদের আরও বেশি পড়াশোনার দিকে নজর দেয়া দরকার। যাতে অন্তত সমান সমান হতে পারে। জেন্ডার সমস্যায় যেন না পড়তে হয়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার নয় মাসের মধ্যে আমাদের একটি পবিত্র সংবিধান উপহার দিয়েছেন। সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকারে কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। সংবিধানের ১৮ (১) ধারায় চিকিৎসক এবং পুষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো উল্লেখ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে’। এই বাক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, বাংলার মানুষ ছিল শোষিত-বঞ্চিত। এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্য তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতাই অর্জন করেননি। বাংলাদেশটাকে তিনি কীভাবে গড়ে তুলতে চান সে পরিকল্পনাও তিনি করে গেছেন এবং দিকনির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। অল্পদিনের মধ্যে তিনি চিকিৎসকদের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদায় উন্নীত করেছেন। এত অল্প সময়ে এত কাজ আর কেউ করতে পারেননি।

এফএইচএস/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।