মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি
সরকারি চাকরিতে কোটা-সম্পর্কিত সচিব কমিটির সুপারিশ বাতিল করে সকল গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন আট সদস্যের প্রতিনিধিদল।
‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের কেন্দ্রীয় কমিটি’র সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুজ্জামান প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে আন্তরিক। তবে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তারা প্রতিটি পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানের ব্যাপারে সচেষ্ট। সচিব কমিটির সুপারিশ তারই একটি নতুন সংস্করণ।’
তারা বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র হয়। এভাবে ২৯ বছর কোটায় কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি হয়নি। বরং মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। কোটা সংস্কার বা বাতিলের আগে এ ২৯ বছরের হিসাব দিতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি পালনে আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন করতে হবে।
৩. ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নে কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪. মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সব নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে তা পূরণ করতে হবে।
৫. ১৯৭২-২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে চলতি বছরেই নিয়োগ দিতে হবে।
৬. বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রথম সেনাবাহিনী। তাই তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পেনশন, বোনাস, রেশনসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তসহ তাদের উত্তরসূরীদের চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা এবং জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮. ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী স্বঘোষিত রাজাকারদের কঠোর শাস্তি এবং
৯. মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্য সবার চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দিতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং কোষাধ্যক্ষ ও দফতর সম্পাদক আহমেদ রাসেলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এ কে এম জামাল উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি কে এম আবদুল্লাহ সোহাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অনলাইন কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক লামিয়া খানম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রজন্ম পরিষদের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান শিমুল প্রমুখ।
এফএইচ/এসআর/বিএ/পিআর