কমলাপুরে অটোচালকদের কাছে জিম্মি যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে শুক্রবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে নেমেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হায়দার আলী। সঙ্গে আছেন স্ত্রী-দুই সন্তান আর তিনটি ব্যাগ। স্টেশন থেকে বের হয়ে বাইরে আসতেই দেখতে পান অনেক সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্টেশনের সামনে দাঁড়ানো। তার আসা দেখে চালকরা অনেকটা ঘিরে ধরেন তাকে। কোথায় যাবেন, গাড়ি লাগবে কি না- এমন সব প্রশ্নের মুখে পড়েন হায়দার আলী।

দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর পর এমনিতেই ক্লান্ত তার ওপর চালকদের টানাটানি। মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় তো কেউই যাবেন না। ফলে এবার ভাড়া মিটমাটের পালা।

হায়দার আলী একজন চালককে জানালেন তিনি যাবেন ধানমন্ডি ২৭-এর একটু সামনে। তখন তার কাছ থেকে ভাড়া চাওয়া হয় সাড়ে ৩শ’টাকা। আবার শর্ত দেওয়া হলো ভিতরে যেতে পারবেন না, তাকে মেইন রাস্তাতে নামতে হবে। তবে ভাড়া একটুও কমানো যাবে না, এক রেট। হায়দার আলী এ ভাড়াতে রাজি হলেন না। বললেন, ভাড়া তো সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে, এত ভাড়া চাচ্ছেন কেন?

আরেকটু সামনে এগিয়ে আরেক চালককে একই গন্তব্যে যাওয়ার কথা বললেন, চালকও যেতে রাজি হলেন। কিন্তু ভাড়া ওই সাড়ে ৩শ’টাকাই। হাতে ব্যাগ, স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে তো এবার মহাবিপদে পড়লেন হায়দার আলী। আরও দুই একটি চালকও একই ভাড়া চাওয়ায় তার বুঝতে বাকি থাকলো না এরা সবাই সিন্ডিকেট। বাধ্য হয়েই ওই ভাড়াতেই অটোরিকশা ঠিক করে কমলাপুর ছাড়লেন হায়দার আলী।

শুধু হায়দার আলীই নয়; দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রেনে কমলাপুরে আসা সব যাত্রীকে জিম্মি করে এভাবে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন চালকরা। প্রতিদিনই কমলাপুর রেল স্টেশনের একই চিত্র।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে কমলাপুর পৌঁছেছেন জাহিদুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে আছেন বোন নিলুফা আক্তার। যাবেন উত্তর বাড্ডা। তাদের সঙ্গেও চালকদের একই আচরণ। ভাড়া লাগবে ৩০০ টাকা। এ ভাড়া ছাড়া কেউই যাবেন না।

জাহিদুর রহমান বলেন, সব সময়ই কমলাপুর স্টেশনের সামনে চালকরা যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। ওরা সবাই এক। একজন যে ভাড়া চাইবেন, অন্যরাও এর কম ভাড়ায় যাবেন না। এটাই তাদের কৌশল। এভাবেই তাদের সিন্ডিকেট চলে আসছে। আর যাত্রীরাও দীর্ঘপথ ট্রেনে এসে পৌঁছানোর পর সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্য, ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে দরদাম করার সুযোগ পায় না। বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া গুনতে হয়।

বেশি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে সেখানে উপস্থিত এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক এরশাদ আলী বলেন, কী করবো ভাই? দীর্ঘক্ষণ এখানে অপেক্ষা করার পর একটা ট্রিপ পাই। আর এখানে অটোরিকশা দাঁড়ানোর জন্য দালালদের একটা নির্দিষ্ট টাকা চাঁদা দিতে হয়। যে কারণে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া না নিলে পোশায় না। আর এখানে যারা অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়ায় তারা একজন যে ভাড়া চাইবে অন্যরাও তা চায়, যেন যাত্রীরা দরদাম করার সুযোগ না পায়। যেহেতু যাত্রীরা দীর্ঘ পথ ট্রেনে জার্নি করে আসে এবং তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য ও ব্যাগ-ব্যাগেজ থাকে তাই তারাও তেমন একটা দরদাম করে না। যে কারণে আমরাও সুযোগ বুঝে বেশি ভাড়া চাই। অনেক সময় ট্রিপ পাই অনেক সময় পাই না।

জানতে চাইলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, চালকদের কি দোষ? একদিকে অটোরিকশার জমা খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে রাস্তা চলতে বিভিন্ন ধরনের চাঁদা দিতে হয়। যে কারণে অনেক সময় যাত্রীদের কাছ থেকে কিছুটা ভাড়া বেশি নিয়ে পুশিয়ে নেয় তারা। যদিও দিন শেষে সব জমা, খরচ, চাঁদার টাকা মিটিয়ে দিয়ে তাদের হাতে সারাদিনের পরিশ্রমের তেমন টাকাই থাকে না। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সব সময় অভিযোগ। কিন্তু তাদেরও তো পরিবার-পরিজন আছে। জমা খরচ, চাঁদাবাজি কমলে চালকরাও যাত্রীদের কাছে তুলনামূলক কম ভাড়া নেবে।

এএস/এনডিএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।