যে কারণে অবরুদ্ধ বিএসএমএমইউয়ের প্রো-ভিসি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:২৮ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
ফাইল ছবি

হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-ভিসিকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধও করে রাখা হলো। কী কারণে এই উত্তেজনা?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই শতাধিক চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং দ্রুত নিয়োগের দাবিতে বুধবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা।

তবে একটি সূত্র বলছে, আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরকারদলীয় পরিচয় দিয়ে শুধু তাদের নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করছেন। গত কয়েকদিন যাবত তারা ভিসি ও প্রোভিসিসহ সকলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল।

বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাগো নিউজকে বলেন, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রোভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারসহ সকলে আলোচনা করছেন। তবে শিক্ষার্থীরা এখনও প্রোভিসি কার্য়ালয়ের সামনে অবস্থান করছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুই শতাধিক চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিয়োগ পরীক্ষার গ্রহণের মাত্র দুদিন আগে পরীক্ষা স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে আজ দুপুরে প্রায় চার শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। পরে মিছিলসহকারে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন বিক্ষুব্ধরা। একপর্যায়ে দুপুর ২টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্লকে যান এবং উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া তার কার্যালয়ে না থাকায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানের কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন তারা। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা।

বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তারা ২০১৬ সাল থেকে নতুনদের নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিকিৎসক নিয়োগে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।

২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চাকরিপ্রত্যাশী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক কামরুলের আলোচনা হয়। তখন তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০ চিকিৎসক নিয়োগের পূর্বসিদ্ধান্ত রয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।

এরপর ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর ২০০ জন মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মেডিকেল অফিসার পদে ১৮০ জন এবং মেডিকেল অফিসার (ডেন্টাল সার্জারি পদে ২০ জনকে নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি মাসের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ২৫ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। তাই তারা বিক্ষোভ করছেন। নিয়োগের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ২০০ পদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরকারদলীয় পরিচয় দিয়ে শুধু তাদের নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। গত কয়েকদিন যাবত তারা ভিসি ও প্রোভিসিসহ সকলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। এ কারণে দ্রুত সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়। সভায় ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া উদ্ভুত পরিস্থিতি ব্যাখা করে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করতে আরও ছয় মাস সময় চান। এ সময় ছয় মাস সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে সিন্ডিকেট সদস্যরা একমত হন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। প্রধানমন্ত্রী লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা গ্রহণ করে যোগ্যদের নিয়োগ দিতে বলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের নিয়োগদানের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, সাড়ে ৮ হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে সরাসরি ২০০ চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া যায় না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের সভায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।

সর্বশেষ বুধবার রাত পৌনে ৮টায় বিএসএমএমইউ ভিসি ভবনের দোতলায় প্রবেশমুখে অর্ধশতাধিক চিকিৎসককে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। জাগো নিউজের ফটোসাংবাদিককে দেখে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময়ে অবরুদ্ধ ভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার অন্যান্যরা আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

এমইউ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।