ঝিয়ের কুঁড়ে ঘরে চাঁদের হাসি


প্রকাশিত: ১২:১৯ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৫

অন্যের জমিতে একটি মাত্র শোবার চালা ঘর। বৃদ্ধ নানি আর মা হালিমা বেগম ঝিয়ের কাজ করে চালান সংসার। রাত হলেই কুঁড়ে ঘরে জ্বলে কুপির আলো। মা হালিমা ঝিয়ের কাজ করে যে টাকা পান তাতে তিন বেলার পেটের ভাত জুটেনা তার ওপর আবার বৈদ্যুতের আলো। আর সেটা চিন্ত করও ছিল রবিউলের কাছে আলাদীনের ম্যাজিকের মতো।  

অর্থ যে পড়াশোনার জন্য বাধা হতে পারে না তা প্রামাণ করেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এইচএসসি পরীক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রুবেল। রুবেল এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পয়েছে।

রুবেলের এই সাফল্যে শুধু পরিবার নয় কলেজের শিক্ষক-ছাত্রসহ প্রতিবেশিরাও দারুণ খুশি। কিন্তু কুঁড়ে ঘরের এই অদ্যম মেধাবী কি পারবে ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে। আর সেই শঙ্কা যে কিছুতেই কাটছে না দারিদ্র রুবেলের পরিবারের।

রুবেলের নানি সালেহা বেগম জানান, রুবেলের বয়স যখন মাত্র তিন মাস। ঠিক তখনই তার বাবা আব্দুল করিম অন্যত্র বিয়ে করে। পরে জামাইয়ের বাড়ি থেকে মেয়ে আর তার সন্তানকে নিয়ে এসে একটি খড়ের ঘরে বসবাস শুরু করি। কিন্তু জগৎ সংসারে তাদের আর কেউ না থাকায় রুবেলে মা হালিমা তখন থেকেই মানুষের বাড়ি আর স্থানীয় ছাত্রবাসে রান্নার কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন। কিছুদিন আগে পাড়া প্রতিবেশিরা আমাদের কষ্ট দেখে ছোট একটি টিনের ঘর করে দিয়েছে বলে জানান বৃদ্ধা সালেহা বেগম।
 
মা হালিমা বেগম জানান, `ছেলেকে আজ পর্যন্ত নতুন শার্ট প্যান্ট কিনে দিতে পারিনি। অন্যের ব্যবহার করা পুরাতন জামা কাপর দিয়েই সে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছে। পরীক্ষার ফি বইপত্র সবই অন্যের সাহায্যে চলে আসছে। ঝিয়ের কাজ করে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারিনি ছেলের মুখে বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মা হালিমা`।

এরপর কান্না থামিয়ে বলেন, `আজ আমার সেই সোনার ছেলেটি খেয়ে-না খেয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফলাফল করেছে। এখন সে ভাল কলেজে ভর্তি হতে চায়`। কিন্তু আমি কি করে ছেলেকে ভাল কলেজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করবো ?

রুবেল বলেন, `কতদিন কতরাত না খেয়ে কেটেছে তা কেউ জানেনা। ক্ষুধার্ত অবস্থায় রোজ সন্ধ্যা বেলায় পাশের বাড়ির বাইরে ঝুলানো বৈদ্যুতিক বাতিটি যখনই জ্বলে উঠতো মুহূর্তে দৌঁড়ে গিয়ে বই খুলে পড়া শুরু করতাম। মশার কামড় খেয়ে হলেও পড়াশোনার কাজটি মাটিতে বসে শেষ করতাম ওই আলোতেই! তাই তো এত দুখ যন্ত্রণার মাঝেও কাঙ্খিত ফলাফলটি অজর্ন করতে পেরেছি বলে বেশ ভাল লাগছে।`

এখন কোন ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্সে পড়তে চায় রুবেল। এরপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে সে দেশের জন্য কিছু করতে চায়। কিন্তু কুঁড়ে ঘরের এই অদম্য মেধাবীর কি সেই স্বপ্ন পূরণ হবে- এমন শঙ্কা যে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তার পরিবারকে।

হাতীবান্ধা এসএস টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জুয়েল জাগো নিউজকে জানান, রুবেল শুধু মেধাবী ছাত্র নয়, পড়াশোনায় খুবই আগ্রহীও।

রবিউল হাসান/এআরএ/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।