প্রতি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জনগণের স্বাস্থসেবা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়া হবে। তবে এবারে সম্ভব না। অাগামীতে ক্ষমতায় এলে তারপর সম্ভব।
অাজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্ব এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বক্তব্য রাখেন।
সকাল ১০টা ২ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাউথ কোরিয়ার ঋণ সহযোগিতায় ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০০ শয্যাবিশিষ্টি ১১তলা এই হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। এটা দেশের প্রথম ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করি। দেশের মানুষের উন্নত সেবা দেয়ার লক্ষ্যেই দেশে এখন চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। এ ছোড়া জেলা, উপজেলায় হাসপাতালের রোগীদের জন্য বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। অাজ যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল করছি সেখানে শুধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও গবেষণা হবে। অামাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সেবা করা।’
‘আমরা একটি স্বাস্থ্য নীতিমালাও করেছি। সে নীতিমালায় দেশের প্রতিটি মানুষ যেন চিকিৎসা সেবা পায়, সে ব্যবস্থা করেছি। একেবারে উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে প্রত্যেকটি হাসপাতালে চিকিৎসার মান যেন উন্নত হয়, সে ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় মেডিকেল কলেজ করার জন্য অামরা অনুমতি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অামাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সেবা দেয়া। মানুষ যেন ভালো থাকে সে চেষ্টা করা।’
শেখ হাসিনা বলেন, নার্সরা যাতে বিএসসি, এমএসসি এমনকি পিএইচডি করতে পারে সে সুযোগও অামরা করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিববিদ্যালয়ে অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসার জন্য অালাদা বিভাগ থাকবে। এ ছাড়া এখানে ১০টি নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। এখানে কমমূল্যে গবির মানুষগুলো বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসা সেবা পেতে সক্ষম হবে। যেসব দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করার জন্য টাকা পয়সা নেই, তাদের টাকা দেয়ারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ-সংক্রান্ত ফান্ডে অাগে ১০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। অারও ১০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বক্তব্যে নার্স সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অামাদের অনেক নার্স দরকার। বয়স শিথিল করে ইতোমধ্যে অামরা অনেক নার্স নিয়েছি। অারও নার্স সৃষ্টি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেবার মান বাড়ানোর জন্য ডাক্তারদের বিদেশ থেকে ট্রেনিং দিয়ে নিয়ে অাসা হচ্ছে। উন্নতদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে স্মারক সই হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হাসপাতালটি চালু হলে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এটা পূর্ণাঙ্গ গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে। গবেষণা উপযোগী অাধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে। চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরাও উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা পাবেন।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অান্তর্জাতিকমানের করবেন। পাশাপাশি গবেষণার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং মানুষের যাতে রোগ না হয় সে ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে অারও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অামরা করে যাব। জনগণের চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে।’
চিকিৎসা সেবা গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে সেবা দেয়ার একটা সুযোগ অাছে। কিছুদিন অাগে অামরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু- ১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এর মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার অারও সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে মানুষ যেন তার চিকিৎসা সেবা পায় তার ব্যবস্থা করা যাবে। সে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সাড়ে নয় বছরে দেশের জনগণের কাছে সকল ধরনের সেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। গড় অায়ু এখন ৭২ বছরে পৌঁছেছে। মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকছে, এটা মানুষের উন্নতি।’
এফএইচএস/এসআর/পিআর