যানজট নিরসনে কাজ করছে ডিএসসিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীতে যানজট সমস্যা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। বিশ্ব ব্যাংকের এক জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলছে, ঢাকা শহরের বর্তমান যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর বছরে টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয় প্রায় হাজার কোটি টাকা। এ শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলে যানবাহন। তবে এ অবস্থা নিরসনে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

পবা জানায়, নব্বই দশকে ঢাকা পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার, ২০০৮ সালে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা ৮ হাজার। নানা সমস্যার কারণে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ হাজারে। অন্যদিকে ২০১০ সালে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৫। যা ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫টিতে। অর্থাৎ দিন দিন প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে পাবলিক বাসের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

এদিকে দিনে অন্তত ৬ লাখ মানুষের নানা প্রয়োজনে রাজধানী ঢাকায় আসছেন। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষে পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, জনবহুল এ শহরে দিনে অন্তত ২১ লাখ পরিবহন ট্রিপের প্রয়োজন। কিন্তু যানজটের কারণে ২১ লাখের তিনভাগের একভাগ ট্রিপ হয় না। রাজধানীতে প্রতি ৩ হাজার যাত্রী যাতায়াতের জন্য বাস ও মিনিবাস রয়েছে মাত্র ১টি। তাছাড়া অটোরিকশাগুলোর এক-তৃতীয়াংশ অচল। তবে গণপরিবহনের সঙ্কটে ঢাকায় প্রতিদিন নামছে ৩৭টি প্রাইভেটকার।

ঢাকার তিনটি রুটে পরিচালিত জাইকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় পাবলিক বাসে প্রতিদিন প্রায় ১৯ লাখ যাত্রী চলাচল করে। এছাড়া ঢাকায় তিনটি করিডোর পাবলিক বাসের যাতায়াতের জন্য গড়ে ৭৭ মিনিট করে সময় লাগে। যার ২৪ শতাংশ বাসের জন্য অপেক্ষা, ৪৪ শতাংশ বাসে ওঠা-নামা ও বাস পরিবর্তন এবং ৩২ শতাংশ সময় ব্যয় হয় চলন্ত বাসে।

তবে আশার কথা হলো রাজধানীর এ সঙ্কট নিরসনে কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। যানজট নিরসনে কাজের বিষয়টি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন এ বিষয়ে সম্প্রতি জানিয়েছেন, মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৩০টি বাস-বে/বাস স্টপেজ নির্মাণের কার্যদেশ প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩টির কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের ৮টি এলাকায় ৫৬০টি স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া ৪টি ইন্টারসেকশন উন্নয়নসহ ৭১টি স্বচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮টি পুলিশ বক্সের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং ৫টি উদ্বোধন করা হয়েছে। সিটি সেন্টারে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনে গঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ে গঠিত কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়। ১০ সদস্যের এ কমিটিতে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।

অন্য সদস্যরা হলেন- বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, রাজউক চেয়ারম্যান, ডিএমপি কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক।

জানা গেছে, যততত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার ক্ষেত্রে সৃষ্ট যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা মাথায় রেখে ৩০টি অত্যাধুনিক বাস স্টপেজ/বাস-বে নির্মাণ করছে ডিএসসিসি। ডিএসসিসির মেগা প্রকল্প অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অত্যাধুনিক এসব বাস স্টপেজে থাকবে উন্নত ফুটপাত, ওয়াইফাই ব্যবস্থা, টি-স্টল, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা।

ডিএসসিসির অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে এ অত্যাধুনিক বাস স্টপেজ/বাস-বে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আজিমপুর রুটে নির্মাণ করা হবে ৬টি এবং একই রুটের বিপরীত পাশে হবে আরও ছয়টি। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী, পল্টন, শাহবাগ পান্হকুঞ্জ রুটে হবে আরও তিনটি এবং বিপরীত পাশে আরও তিনটি। এছাড়া মগবাজার-মালিবাগ থেকে গুলিস্তান সদরঘাট রুটে দুই পাশে মিলে থাকবে আরও ১২টি বাস স্টপেজ।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব খাদেম জানান, যাত্রীদের ওঠা-নামার জন্য অত্যাধুনিক এমন বাস স্টপেজ নির্মাণ হলে যানজট নিরসন ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামায় শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশা করা যায়। ডিএসসিসি এ কাজ শুরু করেছে। তবে এ কাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে।

এএস/আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।