সম্পর্কের মধ্যে প্রটোকল থাকা উচিত না : মোদি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি বলেছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বিমসটেক সম্মেলনে। এর আগে সব মিলিয়ে মোট চারবার আমাদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। খুব শিগগিরই আবারও ভিডিও কনফারেন্স হবে বলে আশা করি। আমি মনে করি, সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রটোকল থাকা উচিত না। সম্পর্ক হতে হবে অবাধ।

সোমবার বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিবিষয়ক প্রকল্প, রেলওয়ের ‘কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন’ ও ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ (বাংলাদেশ অংশ)’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় বক্তৃতায় নরেদ্র মোদি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন।

ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু উপস্থিত ছিলেন।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, ২০১৫ সালে যখন আমি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিই ৫০০ মেঘাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেব। এ জন্য পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশের লিংক স্থাপন করা হচ্ছে। এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হলে শিগগিরই ১ দশমিক ১৬ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সাপ্লাই করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে মেগাওয়াট থেকে গিগাওয়াটে উন্নীত করা ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের প্রতীক।

হিন্দি ভাষায় বক্তৃতার সময় মোদি বলেন, এটা আমার জন্য খুবই স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়, আমরা সম্পর্ক উন্নয়নে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা বিদ্যুৎ কানেকটিভিটিকে বাড়িয়েছি। এরপর রেলওয়ে কানেকটিভিটিকে আরও বাড়াতে দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি, যা চলমান।

তিনি বলেন, রেলওয়ে খাতেও দু’দেশের কানেকটিভিটি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ কানেকটিভিটি ও ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটি একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আখাউড়া ও আগারতলার মধ্যে রেল কানেকটিভিটির কাজ সম্পন্ন হলে আমাদের ক্রস কানেকটিভিটিতে আরেক নতুন পালক যুক্ত হবে। এই প্রজেক্টে যুক্ত হয়ে সহযোগিতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবকেও অভিনন্দন জানাই।

মোদি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেশের উন্নয়নের জন্য বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এই পরিকল্পনাকে স্বীকার করে তাকে সহযোগিতা করা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস- আমরা যত বেশি সম্পর্কের উন্নয়ন করবো, মানুষের মধ্যে মানুষের সম্পর্ক তত বাড়বে। বিকাশ ও সমৃদ্ধির নতুন আকাশ ছোঁব।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক বজায় আছে, তা বিশ্বে একটি রোলমডেল। ভারত থেকে অতিরিক্ত আরও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমাদের (বাংলাদেশের) উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। এই সহযোগিতায় দুই দেশই লাভবান হলো। আমাদের উন্নয়নের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও সহযোগিতা মাইলফলক হিসেবে বজায় থাকবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নের জন্য আরও ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। আশা করি, আপনাদের কাছে এ সহযোগিতা পাব।

বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াট। মততা ব্যানার্জী আমাদের আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছেন। আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি জি তাতে কোনো আপত্তি করবেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটি সেক্টরে দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা ৪১ সাল পর্যন্ত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে এগিয়ে যাচ্ছি। সে হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এ বিদ্যুৎ পেলে বাংলাদেশের অনেক
সাফল্যগাথার সঙ্গে ভারতের অবদান থাকবে। ভারতের কাছ থেকে নতুন নতুন সহযোগিতার ফলে নতুন নতুন বাতায়ন খুলে যাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আরও অটুট থাকবে।

এই সহযোগিতার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীসহ সকল সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

এমএ/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।