আমি ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছি, তুই ব্যবস্থা করিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার সময় আমাকে বলেন, আমি ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছি। তুই আমার মামলার বিষয়ে ব্যবস্থা করিস। তাই আমি আদালতে এসে তার নামে আত্মসমর্পণ করি।’

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান খানের আদালতে জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন শ্রীপুরের মেয়র আনিছুরের নামে কারাগারে যাওয়া তার নিকটাত্মীয় নূরে আলম মোল্লা।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমি মেয়রের মামলার বিষয়ে দেখাশোনা করি। রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) আদালতে এসেছিলাম মামলার বিষয় খোঁজ-খবর নিতে। মেয়রের অনুপ্রেরণায় আমি তার নামে আত্মসমর্পণ করেছি।’

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী রুহুল আমিন খান বলেন, ‘ভুয়া মেয়র আনিছুর সেজে রোববার নূরে আলম মোল্লা আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তিন মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আমরা জানতে পারি, সে শ্রীপুরের মেয়র না। আজ আদালতে তিনি এ বিষয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শ্রীপুরের মেয়র আনিছুর ও তার নিকটাত্মীয় নূরে আলমের নামে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।’

শ্রীপুরের মেয়র ইন্দোনেশিয়ায়, কারাগারে কে?
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান ৯ দিনের সরকারি সফরে শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ইন্দোনেশিয়া গেছেন। তার বিদেশ যাওয়ার পরের দিন রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় মেয়রের নাম-ঠিকানা দিয়ে তার নিকটাত্মীয় নূরে আলম আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে মেয়রের ছোট ভাই বলেন, মেয়রের আস্থাভাজন যুবলীগ কর্মী নূরে আলম মোল্লা নামে একজন মেয়রের নামে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেছেন বলে শুনেছি। এ বিষয়ে মেয়র নিজেই কিছু জানেন না বলে দাবি করেন তিনি (মেয়রের ভাই)।

অপরদিকে মেয়রের আইনজীবী বলছেন, চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) সঙ্গে নাম ঠিকানা মিল থাকায় মেয়র আনিছুরের নামে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছেন। তিনি সঠিক মেয়র কি-না তা কাগজে প্রমাণিত হবে।

মেয়র আনিছুর রহমানের ছোট ভাই মাওনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার রাতে দক্ষিণ এশিয়ার পল্লী উন্নয়নবিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দিতে সরকারি সফরে মেয়র আনিছুর রহমান ইন্দোনেশিয়ায় গেছেন। তিনি সেখানে ৯ দিন থাকবেন।

তিনি আরও বলেন, শ্রীপুরের যুবলীগ কর্মী নূরে আলম মোল্লা নামে একজন মেয়রের নামে রোববার ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন বলে আমি শুনেছি। হয়তোবা আইনজীবী বলেছেন, মেয়রের নামে একজন দাঁড়িয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করবেন। মামলার জন্য মেয়রকে আদালতে যেতে হবে না। তবে মেয়র এ বিষয়ে কিছু জানে না।

শ্রীপুর পৌরসভার সচিব বদরুজ্জামান বাদল বলেন, আমার উপস্থিতিতে শনিবার রাত ১১টায় মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান ৯ দিনের এক সফরে ইন্দোনেশিয়ায় গেছেন।

মেয়র আনিছুরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান নামে একজন রোববার চার মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। চার্জশিটের সঙ্গে তার নাম ও পিতার নাম মিল ছিল। আদালত তিন মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি সঠিক মেয়র কি-না এ বিষয়ে কাগজে প্রমাণিত হবে।

দুদকের আইনজীবী রুহুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, রোববার অর্থ আত্মসাতের চার মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত এক মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। অপর তিন মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, জামিন আবেদনে তিনি নিজেকে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান বলে উল্লেখ্য করেন।

অর্থ আত্মসাৎ : শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র কারাগারে
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় রোববার গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানসহ দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খান। কারাগারে যাওয়া অপর আসামি শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক হিসাবরক্ষক আব্দুল মান্নান।

এ দিন চার মামলায় মেয়র আনিছুর রহমান ও আব্দুল মান্নান দুই মামলায় আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবী রুহুল ইসলাম খান তাদের জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মেয়র আনিছুর রহমানকে এক মামলায় জামিন মঞ্জুর এবং অপর তিন মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপরদিকে আব্দুল মান্নানের দুই মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

চার মামলার মধ্যে এক মামলায় অভিযোগ থেকে জানা যায়, পৌরসভার রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত ট্যাক্স ও বিবরণীর ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেন তারা। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন।

আরেক মামলায় অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১০ সালে শ্রীপুর পৌরসভার অন্তর্গত পাঁচটি হাট-বাজার থেকে সাত লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন।

অপর দুই মামলায়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

জেএ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।