আট বিষয়ে ঐকমত্যে বিজিবি-বিএসএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫২ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে ৪৭তম সীমান্ত সম্মেলন আজ জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন (জে আর ডি) স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া সীমান্ত সম্মেলন শেষে আজ সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের অনুসন্ধান ও মানবপাচার রোধসহ আটটি বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে একসঙ্গে কাজ করার যৌথ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী কে কে শর্মার নেতৃত্বে ২০ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।

সীমান্ত হত্যা বন্ধে পদক্ষেপ

সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হতাহতের ঘটনা রোধে বিএসএফ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিজিবি মহাপরিচালক ধন্যবাদ জানান তবে হতাহতের ঘটনা এখনও শূন্যের কোঠায় নেমে না আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে হতাহতের ঘটনা এড়াতে বিএসএফ নন-লিথেল অস্ত্র ব্যবহার করছে এমনকি সশস্ত্র সীমান্ত অপরাধীদের বিপদজনক আক্রমণের শিকার হয়েও বিএসএফ সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতা প্রদর্শন ও ন্যূনতম শক্তি প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সীমান্ত অপরাধীদের দ্বারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম বন্ধ করাসহ তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে হতাহতের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে উভয়পক্ষ প্রতিরোধমূলক যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর অনুসন্ধান

বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের অনুসন্ধানে বিজিবিসহ বাংলাদেশি অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতার প্রশংসা করে এ বিষয়ে আরও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশে এ ধরনের কোন গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নেই উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ কখনই তার ভূমি অন্যকোন দেশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধী গোষ্ঠীকে ব্যবহারের সুযোগ দেয় না।

bgb-(2)

সীমান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ইচ্ছাকৃত সীমান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অসতর্কতাবশত সীমান্ত অতিক্রমকারী নাগরিকদের নিজ দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তরে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছেন।

মানবপাচার রোধ

উভয়পক্ষ মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি পাচারের শিকার হওয়া নাগরিকদের দ্রত উদ্ধার করাসহ তাদের পুনর্বাসনে নিজ নিজ দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়েছেন।

জাল মুদ্রা পাচার রোধ

বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচার রোধে সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিজিবিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রশংসা করেন। মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণ পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালান বন্ধে একে অপরের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং চোরাচালান রোধের যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে উন্নয়ন

সীমান্তে উন্নয়নমূলক অধিকাংশ কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আলোচনার মাধ্যমে উভয়পক্ষ পরস্পরের সম্মতি লাভ করায় নিজেদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন।

ক্রাইম ফ্রি জোন ঘোষণা

যশোর সীমান্তে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ এর কার্যকারিতার প্রশংসনীয় উল্লেখ করে অন্যান্য সীমান্তে পর্যায়ক্রমে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ ঘোষণা করতে নীতিগতভাবে সম্মতি প্রকাশ করেন উভয় বাহিনীর প্রধান।

সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি

উভয়পক্ষ পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানান, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত অংশগ্রহণমূলক আলোচনায় উভয়পক্ষের সুচিন্তিত মতামতের ফলে সম্মেলন অত্যন্ত অর্থবহ হওয়ায় উভয়পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। যা দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতিফলন।

এখানে উল্লেখ্য যে, মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন ২০১৯ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উভয়পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

জেইউ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।