‘উৎপাদনের চেয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করা ভালো’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। উৎপাদনের চেয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করা ভালো। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে এর অবকাঠামোসহ মেইনটেইন করতে যে ব্যয় হয় তার চেয়ে আমদানি করা লাভজনক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
শেখ হাসিনা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে তিনি আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে চান। এ মাসেই ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির উদ্বোধন হচ্ছে। এ ছাড়া আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির আলোচনা চলছে।
‘নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এর মধ্যে নেপালের সঙ্গে আমরা সমঝোতাস্মারক সই করেছি। বাংলাদেশ বিদ্যুতে যাতে স্বয়ংসম্পন্ন হয় সে চেষ্টাও আমরা করে যাচ্ছি’,- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এক লাখ ৩০ হাজার সেচপাম্পে নতুন সংযোগ দেয়া হয়েছে। ফলে আমাদের ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। সারাদেশে পাহাড়ি, দ্বীপ ও হাওর অঞ্চলে ৫৩ লাখ সোলার পাওয়ার দিয়েছি। সোলার পাওয়ার দিয়ে আমরা সেচকার্য চালানোর পরিকল্পনাও করছি। এলপিজি গ্যাস উৎপাদনের জন্য ৫৬টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছি। প্রতিযোগিতার কারণে ১৫ টাকার গ্যাসের সিলিন্ডার এখন ৮০০ টাকায় নেমে এসেছে।
বিদ্যুতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, এরই মধ্যে আমরা প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চলন লাইন ৮ হাজার কিলোমিটার থেকে ১১ হাজার ১২২ সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করেছি। বিতরণ লাইন ২ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার হতে ৩ লাখ ৫৭ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। এরপরে দ্বিতীয় দফা সরকার গঠন করি। বর্তমানে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। তাদের জন্যে যে ক্যাম্প করা হয়েছে। সেই ক্যাম্পের রাস্তাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দিয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আজ আমরা ৪৭ লাখ গ্রাহক থেকে ৩ কোটি ৮ লাখ গ্রাহকে উন্নীত হয়েছি। আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে চাই। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশ হবে উদ্ভাবনী বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউাস। এতে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের অগ্রগতির ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের একটি চিত্র তুলে ধরেন জ্বালানি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, নেপালের জ্বালানি-পানিসম্পদ ও সেচমন্ত্রী বারসামান কুন অনন্ত বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম এমপি। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অবদান রাখায় ৪৭ ব্যক্তি ও ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচমন্ত্রী বারসামান কুন বলেন, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে সমোঝতাস্মারক সই করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে উভয়দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। আগামী ১০ বছরের মধ্যে নেপাল ১৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
এফএইচএস/জেডএ/পিআর