মোটরসাইকেলে বিরক্ত পথচারী
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় প্রতিটি সিগন্যালেই দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাড়ি। আটকা পড়া গণপরিবহনে যাত্রীদের বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা। প্রতিটি সিগন্যালের সামনের দিকে ২০ থেকে ৩০টি করে মোটরসাইকেল। কেউবা সিগন্যাল অমান্য করেই দিচ্ছেন টান, কেউবা যানজট থেকে মুক্ত হতে ফুটপাতেই তুলে দিচ্ছেন মোটরসাইকেল। ফুটপাতে মানুষের ভিড়েও হর্ন বাজিয়ে চলার চেষ্টা। এতে পথচারীদের ভোগান্তি হলেও সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তাদের।
রাজধানীর প্রতিটি সড়কেই এঁকেবেঁকে, বামে-ডানে, ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলার এ দৃশ্য প্রতিদিনের। এছাড়া অন্যসব গাড়ি সিগন্যালে অপেক্ষা করলেও মোটরসাইকেলকে প্রায়ই তা লঙ্ঘন করেই চলতে দেখা যায়।
মেগাসিটি ঢাকায় প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে মানুষ বাড়লেও সে হারে বাড়েনি গণপরিবহন। অফিস টাইমে এবং অফিস শেষে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গণপরিবহনে উঠতে পারে না সাধারণ মানুষ। বয়স্ক, নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ।
এদিকে ঢাকায় গণপরিবহন না বাড়লেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোটরসাইকেল। মূলত গণপরিবহন সঙ্কট, যানজট, প্রতিটি বাসেই গাদাগাদি আর সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছাতে না পারা থেকে মুক্তি পেতে রাজধানীতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত ঢাকায় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ২০৫টি, যা ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৮১টি। এরপর ২০১১ সালে নিবন্ধিত হয়েছে ৩৪ হাজার ৭০৮টি, ২০১২ সালে ৩২ হাজার ৮১০টি, ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৩৩১টি, ২০১৪ সালে ৩২ হাজার ৮৯৪টি, ২০১৫ সালে ৪৬ হাজার ৭৬৪টি, ২০১৬ সালে ৩৮ হাজার ৭৩৮টি এবং ২০১৭ সালে ৭৫ হাজার ২৫১টি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসেই নিবন্ধিত হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৭৯টি।
একদিকে রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাতই অবৈধ দখলে। পাশাপাশি মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মোটরসাইকেল। এছাড়া রাইড শেয়ারিং অ্যাপসে যাত্রী পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিনই নামছে নতুন নতুন মোটরসাইকেল। পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেকে নিজের মোটরসাইকেল এনে রাজধানীতে ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী বহনের কাজ শুরু করেছেন। তারা এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ফলে রাজধানীর রাস্তায় তুলনামূলক অদক্ষরাও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালান তাদের অনেকেই মানছেন না সিগন্যাল। তুলে দিচ্ছেন ফুটপাতে, চালিয়ে যাচ্ছেন বেপরোয়া গতিতে। এতে যেমন বিরক্ত হচ্ছেন পথচারী, তেমনি বিরক্ত অন্য পরিবহন চালকরাও।
অভিজাত এলাকা গুলশানের ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী। এ সময় রাস্তায় যানজটও ছিল চোখে পড়ার মতো। ঠিক তখনই ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেন একজন। ফুটপাতে মানুষের ভিড় দেখেও চালক হর্ন বাজাচ্ছিলেন। এতে করে বিরক্ত হয়ে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন রফিকুল ইসলামসহ অন্য পথচারীরা। রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর সব সড়কেই মোটরসাইকেল চালকদের অত্যাচারে হাঁটা যায় না। মানে না কোনো সিগন্যালও। মাঝে মাঝেই ফুটপাতে তুলে দেয় মোটরসাইকেল, এরপর হর্ন বাজিয়ে চলে যায়। আমরা কোনো প্রতিবাদ না করায় এ ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আর ইদানীং ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
একই ধরনের অভিযোগ করে মিরপুর-সদরঘাট রুটের বিহঙ্গ বাসের চালক এরশাদ আলী বলেন, রাজধানীর সড়কে ইদানীং মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা সচরাচর কোনো সিগন্যাল মানে না। একবার ডানে যায় তো একবার বামে। এছাড়া সিগন্যাল অমান্য করে তারা মোটরসাইকেল টান দেয়, সড়কে বেশি ভিড় থাকলে মাঝে মাঝে ফুটপাতেও তুলে দেয়। এতে পথচারীরা যেমন বিরক্ত, তেমনি আমরাও।
রাজধানীর একটি ব্যস্ত সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহাফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিটি সিগন্যালেই প্রচুর মোটরসাইকেল দেখা যায়। বর্তমানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা তুলনামূলক দ্রুত বেড়েছে। অনেক সময় কেউ কেউ সিগন্যাল অমান্য করে টান দেয়। এছাড়া রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী বহন করে উপার্জনের আশায় অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে নেমেছেন। ফলে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে চলাচলের জন্য তুলনামূলক অদক্ষ চালকরা সিগন্যাল অমান্য করার পাশাপাশি ফুটপাতেও মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছেন। যদিও এমনটা চোখে পড়লে আমরা তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান শাকুরী বলেন, ঝামেলামুক্ত ও সহজলভ্য পরিবহন সেবার মাধ্যমে অ্যাপসভিক্তিক পরিবহন ব্যবস্থা নগরবাসীকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে এই সেবা চালু হওয়ায় ঢাকার বাইরে থেকেও জীবিকার তাগিদে অদক্ষ ও এই শহরের ট্রাফিক আইন না জানা চালকরা জ্যাম তৈরি করছে। আবার অতিরিক্ত বাইক সড়কে যুক্ত হওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে রাজধানীতে।
এএস/এমএমজেড/পিআর