নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ১৭ আগস্ট ২০১৮

গত ৮ আগস্ট যারা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছিলেন, সেসব ঘরমুখো মানুষই আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশনে এসেছেন। ঈদকে সামনে রেখে অগ্রিম টিকিটের সিডিউল অনুয়ায়ী আজ শুক্রবার থেকেই ঘরে ফেরা শুরু হয়েছে।

কমলাপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। পুরো স্টেশন জুড়েই ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়। কেউ ব্যাগ হাতে, কেউবা পরিজনের হাত ধরে ছুটছেন কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন তারা।

ঈদ আসলেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখী মানুষদের। তবুও ঘরে ফেরাতেই যেন সব আনন্দ। রাজধানীর একঘেয়েমি জীবনের সাময়িক বিরতি দিয়ে কর্মজীবী মানুষের সামনে আসে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মুহূর্ত। আর সেই ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ।

সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে সব ট্রেনগুলোতেই ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়, তবে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনেগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল আরও বেশি।

Eid-Train

৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়ানো উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনটি যখন প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াল, নিমিষেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে গেল পুরো ট্রেনটি। তখনও যাত্রীরা আসছেন টিকিট অনুযায়ী, উঠে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট বগিতে। ট্রেনটি স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সকাল ৮টায়। কিন্তু বিলম্ব করে ট্রেনটি স্টেশনে আসায় ৮ টা ৫০ মিনিটেও ছেড়ে যেতে পারেনি।

নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের আজকের যাত্রীদের মধ্যে একজন নিলয় আহমেদ। তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি এসেছেন স্ত্রী আর দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে। নিলয় আহমেদ বলেন, ‘অফিস থেকে একটু আগেভাগেই ছুটি ম্যানেজ করে ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফিরছি। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি যাত্রী থাকবে, যে কারণে প্রথম দিন যাওয়া। তবুও ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড়। গত ৮ আগস্ট ১৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় বেশিরভাগ ট্রেনই বিলম্বে ছাড়ে, তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে চাই-তারা যেন সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখার চেষ্টা করেন। তা না হলে ঘরে ফেরা যাত্রীদের খুব ভোগান্তি হয়।’

একই ট্রেনের আরেক যাত্রী জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘প্রায় ১১/১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আজকের এই টিকিট কেটেছিলাম, কিন্তু ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের এতটাই চাপ যে, খুব কষ্ট করে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। ভিড়ের কারণে সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারব কি না তা নিয়েই সংশয়।’

Eid-Train

ট্রেনে ঈদযাত্রা বিষয়ে বলতে গিয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ যেমন সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছেন, ঠিক তেমনি সুশৃঙ্খলভাবে তারা চলাচল করতে পারবেন বলে আশা করি। সেইসঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন ট্রেনের ছাদে বা বাফারে যাতায়াত না করেন, সেই প্রত্যাশাও আমরা করছি।’

যাত্রী চাপ মাথায় রেখে প্রতিটি ট্রেনে কমবেশি বগি সংযুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে নির্ধারিত নিয়মিত ট্রেন ছাড়াও শনিবার (১৮ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের বিশেষ ট্রেন। এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সুবিধার্থে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে আছে-

দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল : ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ- ঢাকা (ঈদের আগে ১৮-২১ আগস্ট ৪ দিন এবং পরে ২৩-২৯ আগস্ট ৭ দিন)।

চাঁদপুর স্পেশাল ১ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম (ঈদের আগে ১৮-২১ আগস্ট ৪ দিন এবং ঈদের পরে ২৪-৩০ আগস্ট ৭ দিন)।

চাঁদপুর স্পেশাল ২ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম (ঈদের আগে ১৮-২১ আগস্ট ৪ দিন এবং ঈদের পরে ২৪-৩০ আগস্ট ৭ দিন)।

রাজশাহী স্পেশাল : রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী (ঈদের আগে ১৮-২০ আগস্ট ৩ দিন এবং ঈদের পরে ২৪-৩০ আগস্ট ৭ দিন)।

দিনাজপুর স্পেশাল : দিনাজপুর-ঢাকা-দিনাজপুর (ঈদের আগে ১৮-২০ আগস্ট ৩ দিন এবং ঈদের পরে ২৪-৩০ আগস্ট ৭ দিন)।

লালমনিরহাট স্পেশাল : ঢাকা-লালমনিরহাট-ঢাকা (ঈদের আগে ১৮-২১ আগস্ট ৪ দিন এবং ঈদের পরে ২৪-৩০ আগস্ট ৭ দিন চলবে)।

খুলনা এক্সপ্রেস : খুলনা-ঢাকা-খুলনা (ঈদের আগে ২১ আগস্ট একদিন চলবে)।

শোলাকিয়া স্পেশাল-১ : ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন চলাচল করবে।

শোলাকিয়া স্পেশাল-২ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন চলবে।

এএস/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।