বাসায় জিয়া-খালেদার ঘনঘন আসা-যাওয়া ছিল : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আমার বাবা মা-সহ স্বজনদের হত্যা করেছে সেসব সেনাসদস্যের আমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। ডালিম ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকত, এমন কোনো দিন নাই আসত না। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়ারও আমাদের বাসায় ঘনঘন আসা-যাওয়া ছিল। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, এই যে ঘনঘন আসা, এর পেছনেও কি ষড়যন্ত্র ছিল?

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাম্যবাদী দলের প্রধান দিলীপ বড়ুয়া ও যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ অাগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় ‘সরাসরি জড়িত’ থাকার কারণেই জিয়াকে পরে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল বলে বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরদিন বেতারে সেই ঘোষণা দেয়া মেজর শরিফুল হক ডালিমের (পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) প্রসঙ্গ টেনেও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ অাগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন সেনাকর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমান মেজর ছিল। তিন বছরের মধ্যে প্রমোশন দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানইতো তাকে মেজর জেনারেল করেছিলেন। সেই জিয়া এমন জঘন্য কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুকে শুধু হত্যাই করা হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার আটকে রাখা হয়েছিল দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর তা বাতিল করলে বিচারের পথ খোলে। এরপর অনেক সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু কেউ হত্যাকাণ্ডের বিচার করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কারণেই এ বিচার হয়েছে। এ জন্য তিনি দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। কারণ জনগণ যদি ভোট না দিত আওয়ামী লীগ এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারতো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্তান হিসেবে বাবার ভালোবাসা যতটুকু না পেয়েছি তার চেয়ে বেশি ভালোবাসা পেয়েছে এ দেশের মানুষ। তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় কেটেছে কারাগারে। কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাংলার মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে আপস করেননি। পাকিস্তানিরা প্রতিশোধ নিতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমাদের দেশের কুলাঙ্গার রাজাকাররা তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে। যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করতো না তারাই ১৫ আগস্টের জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ১৫ আগস্টে নিহত শহীদদের বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অনেক মানুষ আমার কাছে তাদের স্বজন হত্যার বিচারের জন্য আসে। আমরা অন্যায়কারীদের ধরছি, বিচার করছি। কিন্তু আমি দেশে ফিরে আমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের বিচার চাইতে পারিনি। আমি যেন দেশে ফিরে না আসতে পারি সে জন্য আমাকে এবং আমার ছোট বোন রেহানাকে বাধা দেয়া হয়েছে। জিয়া রেহানার পাসপোর্ট ইস্যু করতে দেয়নি। ১৯৮০ সালে লন্ডনে প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করি। সেই কমিটির প্রধানকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হয়নি। বিচারের জন্য আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ বিচারের জন্য অনেক হুমকি-ধামকি দিয়েছে। তারপরও বিচার করেছি। উপস্থিত নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, অন্যায়ের কাছে কোনোদিন মাথা নত করবেন না। এটাই হোক আজকের দিনের শপথ।

এফএইচএস/এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।