ডাক্তাররাই দালালের ভূমিকায়!


প্রকাশিত: ০৭:০৩ এএম, ০৯ আগস্ট ২০১৫

‘সরকারি হাসপাতালে আইছিলাম বিনা পয়সায় মেয়ের চিকিৎসা করাইতে।  ডাক্তার কতগুলা পরীক্ষা দিয়া একটি ছেলের সঙ্গে আমাকে পাঠিয়ে দেন সিটি ক্লিনিকে।  সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা করাইতে ৩ হাজার ৫০ টাকা লাগবো বলে জানান ক্লিনিকের লোকজন।  এত টাকা আমি কই পামু।  তাই মেয়ের চিকিৎসা না কারাইয়্যা চইলা যাইতেছি। ` কথাগুলো বলছিলের শরীয়তপুর সদর উপজেলার উত্তর ভাষানচর গ্রামের হালান মাদবর।  তিনি তার ১৩ বছরের মেয়ে সোনিয়াকে নিয়ে ৯ আগস্ট শরীয়তপুর সরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। সোনিয়ার ঠাণ্ডা কাশির সমস্যা।  হাসপাতালে টিকিট কেটে মেয়েকে নিয়ে ডা. সুমন কুমার পোদ্দারের চেম্বারে গেলে ডা. সুমন একগাদা পরীক্ষা দিয়ে দালালের মাধ্যমে সিটি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন।

একই দিন ডামুড্যা উপজেলার মডের হাট এলাকা থেকে জামাল শিকদারের স্ত্রী মিনারা বেগম তার আট বছরের মেয়ে জুলেখাকে নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে।  জুলেখার বুকে ব্যাথা।  হাসপাতালে টিকিট কেটে ডা. রাজেশ মজুমদারের চেম্বারে গেলে তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে কতগুলো পরীক্ষা দিয়ে পাঠিয়ে দেন সিটি আধুনিক হাসপাতালে।

শরীয়তপুর জেলার প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের সুচিকিৎসার জন্য স্থাপিত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা এভাবেই জড়িয়ে পড়ছেন রোগীর দালালিতে।  সেবা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত ডাক্তার ও দালালদের খপ্পরে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।  দিনের পর দিন  রোগীরা প্রতারিত হলেও যেন দেখার কেউ নেই।  

হাসপাতালে জনবলের অভাব থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার ও কর্মচারীরা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় ন্যূনতম সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।  আর এসব ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্বে রোগীরা এখন হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।  ফলে চিকিৎসা সেবা যেমন ব্যহত হচ্ছে, তেমনি রোগীদেরও নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে ডাক্তারদের নির্ধারিত কক্ষে ডাক্তারের আশপাশে রোগী ছাড়াও অনেক লোক বসে থাকেন। যারা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল।  কমিশনের আশায় আর ডাক্তার নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার কথা বিবেচনা করে ওইসব দালালদের সহায়তায় গরীব রোগীদের তার পছন্দের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন একগাদা পরীক্ষা দিয়ে।
 
শরীয়তপুর জেলার সিভিল সার্জন মো. মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।  অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

মো. ছগির হোসেন/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।