নীলগিরির নীলিমায়
সৌন্দর্যের লীলাভূমি পুরো বাংলাদেশ। এর এক একটি জেলা-অঞ্চল এক একটির চেয়ে সুন্দর। পুরো দেশ ঘুরে এলেও তৃষ্ণার্ত মনের তৃষ্ণা থেকেই যাবে। যারা বেড়াতে চান, আকাশ ছুঁয়ে নিতে চান তাদের জন্য আকাশ ছোঁয়া ভালোলাগা, আর এই ভালোলাগা অনুভব করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে পাহাড় ঘেরা ভূমিতে। হ্যা আমি বান্দরবানের কথা বলছি, সৌন্দর্যের এক তুলানহীন অঞ্চল বান্দরবান। পূর্বে মায়ানমার, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, উত্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আর দক্ষিণে মায়নমার ও বঙ্গোপসাগর। বান্দরবানে আসাটা আজকাল কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। এবার বান্দরবান থেকে ৪৭ কি.মি. দক্ষিণ পূর্বে যেতে হবে পাহাড়ের চূড়ায়, অসম্ভব ভালোলাগার সড়ক চুম্বক রেঞ্জে। উচুঁ থেকে উচুঁতে আরো উঁচুতে চলবে আপনার গাড়ি অথচ আপনি চারদিকের পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে এতটাই বিমোহিত থাকবেন যে কত উঁচুতে চলছেন বুঝতেই পারবেন না, কেবল পেছনে ফেলে আসা পথটুকুর দিকে তাকালে বলে দিবে কি সর্পিলভাবে নির্মিত পাহাড়ি পথ। তখন শুধু বলবেন, এতটা ভয়ঙ্কর পাহাড়ি চূড়া বেয়ে চললাম কেমন করে !
চুম্বক চূড়া পাড়ি দিয়ে একই বেল্টে চলতে চলতে আরো ১৯ কি. মি. পথ চলার পরে যে জায়গাটিতে আসবেন এতক্ষণ তারই কথা চলছিল। এখানকার একটি পাড়ার নাম কাপ্র পাড়া। এ চম্বুক বেল্টের উপরে কাপ্র পাড়া এলাকাতেই আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত হয়েছে হিল রিসোর্ট নীলগিরি। সমতল থেকে প্রায় ২৫ শত ফুট উপরে নির্মিত অসম্ভব রকমের সুন্দর তিনটি কটেজ রয়েছে এখানে।
চাইলে হেলিকাপ্টারেও আসতে পারেন। রয়েছে একটি হেলিপ্যাড। সবচেয়ে উপরে দুটো কটেজ, নাম মেঘদূত আর আকাশ লীনা এদের একধাপ নিচে রয়েছে আরেকটি কটেজ নীলাঙ্গনা। উপরে আছে একটি ক্যাফে। এখানে স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন সব ধরনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে পুরো পাহাড়ি দৃশ্য পেতে হলে কম করে একদিন একরাত থাকতে হবে। কেননা ভালোলাগাটা বিকেলে শুরু হয়। অসম্ভব বাতাস। ক্রমে ক্রমে সূর্য নেমে আসে, পাহাড়ের আড়ালে ডুবে যায়। তার পর ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামে। কি যে মনোরম দৃশ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। রাতে পাহাড়ও ঘুমিয়ে পরে। চারিদিকে অন্ধকার নামে। তাই বিনোদনের জন্য রয়েছে ডিস লাইনসহ টেলিভিশন। শীতকালে গরম পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।
থাকা-খাওয়াসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে। পরিচ্ছন্ন আর আতিথেয়তায় ভরা পরিবেশ। রাত কেটে যাবে সারাদিনের ভাবনায় তারপর আসবে সবচেয়ে ভালোলাগার আরেকটি চমক। সে জন্য খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে আপনাকে। চারিদিকে তাকিয়ে আপনার কাছে অচেনা মনে হবে, মনে হবে বরফে ঢেকে গেছে গোটা পাহাড়ি অঞ্চল। যতদূর চোখ যাবে শুধু মনে হবে সাদা শাড়ির আঁচলে ঢাকা পড়েছে সমস্ত পাহাড় চূড়া, কিন্তু যখনই জানবেন ওগুলো সব মেঘ! আনন্দে শিহরিত হবে মন। মেঘ কি তবে ছোঁয়া যায়! হ্যা মেঘের নিচু স্তরটা পর্বত চূড়ায় আটকা পড়ে ছিল।
সকালের রোদ ফুটতেই মেঘগুলো ধীরে ধীরে ঘুম ভেঙে উড়তে থাকে আকাশে, সে দৃশ্য অসম্ভব রকমের সুন্দর! এত সুন্দরভাবে মেঘের সাথে বসবাস আর কোথায় পাবেন বলুন? আমি নিজের দেশের কথা বলছি। আগে কেওক্রাডংকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলা হতো তবে এখন নতুন আবিষ্কৃত তাজিং ডং কে প্রথম ধরা হচ্ছে তবে সে হিসেবে নীলগিরির অবস্থান কততম আমার জানা নেই। তবে সৌন্দর্যে নীলগিরি সর্বোত্তম। নীলগিরির উত্তর-পশ্চিম কোণে কেওক্রাডং আরও আছে উত্তর পশ্চিম কোণে রুমা এবং উত্তরে চিম্বুক। নীলগিরি হিল রিসোর্ট উদ্বোধন হয় ২০০৬ সালের ২৫ জানুয়ারি। এই স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আগে থেকেই বুকিং নিতে হবে। নীলগিরি দেখার সুবাদে আপনি ঘুরতে পারেন পুরো বান্দরবান নাইখ্যানছড়ি, আলি কদম, রুমা, বলিপাড়া, থানচি। সৌন্দর্য পিপাসু মনে ছুয়ে যাক নীল আকাশ, মিশে যাক ভালোলাগাটুকু নীলগিরির অপূর্ব সৌন্দর্যে।
এইচআর/পিআর