৬ লাখ পশু নিয়ে প্রস্তুত চট্টগ্রাম
আসন্ন কোরবানির ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের আড়াই হাজারের বেশি খামারি গবাদি পশু পালন করছেন। চট্টগ্রামের এসব খামারে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি পশু মজুদ আছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তাই গতবারের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও চট্টগ্রামে পশুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে বলে মনে করছেন খামারি ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
গত বছর কোরবানির ঈদে চট্টগ্রাম জেলার ৮০ শতাংশ পশুর জোগান দিয়েছেন এখানকার খামারিরা। চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় পশু জবাই হয়েছিল প্রায় ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩১টি। এর মধ্যে চার লাখ ১০ হাজারই ছিল গরু। বাকি পশুর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া ছিল এক লাখ ৮২ হাজার ৪৪১ এবং মহিষ ছিল ৩ হাজার ৩টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর কোরবানি পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৪টি পশু। গত সপ্তাহ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে কোরবানি উপযোগী পশু মজুদ হয়েছে ৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৩৪টি। এরমধ্যে গরু রয়েছে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫শ’ ৩টি, মহিষ ৪৩ হাজার ৯শ’ ২১টি, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ৮শ’ ১৯টি অন্যান্য ৩৯১টি। দেশের উত্তরাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকা থেকে আসছে আরও প্রায় ১ লাখ পশু। ফলে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এবার মিয়ানমার বা ভারত থেকে পশু না এলেও সঙ্কটের আশঙ্কা নেই।
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার খামারি হাজী মো. নাছির তার খামারে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে পশু পালনে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে সরকার। এই কর্মসূচির সফলতা পেতে শুরু করেছে খামারিরা। এবার চট্টগ্রামের পশু দিয়েই জেলার কোরবানির পশুর চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ গরু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. অলি আহমদ জাগো নিউজকে জানান, ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে গরু আমদানি কম হলেও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বেনাপোল, পোকখালি, কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর বন্দর দিয়ে সীমিত আকারে গরু আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে মজুদ ভালো থাকায় সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। ইতোমধ্যে দেশের কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং তিন পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা পশু দিয়ে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো যাবে।
তবে অতীতে সঙ্কট না থাকলেও দামের ক্ষেত্রে পথে পথে চাঁদাবাজি এবং বাজারগুলোতে নিয়ন্ত্রণহীন ‘খুঁটি বাণিজ্যে’র মাশুল গুণতে হয়েছিল সাধারণ ক্রেতাদের। তাই এবার দাম সহনীয় রাখতে চাঁদাবাজদের উৎপাত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাজারগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, পথে পথে চাঁদাবাজদের যে উৎপাত, তা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এবার গরুর দাম সহনীয় রাখতে পারবেন তারা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ জিলহজ থেকে (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১৩ আগস্ট থেকে) নগরীর ২টি স্থায়ীসহ ৮টি পশুর হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশু বেচা-কেনা শুরু হবে।
চসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন অস্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী গরুর বাজার (নূর নগর হাউজিং), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন স্থান (ইজারাদার কর্তৃক নিজ উদ্যোগে জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে), স্টিলমিল বাজার, কমল মহাজন হাট, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ (কাঠগড়) এবং পোস্তারপাড় স্কুল মাঠের অস্থায়ী ছাগল বাজার। এছাড়া দুটি স্থায়ী বাজার হচ্ছে বিবিরহাট ও সাগরিকা গরুর বাজার।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও বাজারগুলোতে চসিক নজরদারি করবে। প্রতিটি বাজারে ৪ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম থাকবে। এছাড়া লাইটিংয়ের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো থাকবে চসিক নিয়ন্ত্রিত বাজারগুলোতে।
চট্টগ্রামের খামারিরা জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার অসংখ্য খামারে চলছে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করছেন। খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও নিজেদের মতো করে গরু মোটাতাজা করছেন। এক্ষেত্রে সবাই দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কিন্তু তাদের দুশ্চিন্তা ভারতীয় গরু নিয়ে। অন্যবারের মতো এবারও কোরবানির হাটে ভারতীয় গরু আসলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। এ ব্যাপারে তারা সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের ২৩০ খামারে গরু মজুদ রয়েছে ২৭ হাজার, সীতাকুণ্ডের ১৫০ খামারে গরু রয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৭টি, সন্দ্বীপের ১২০ খামারে গরু মজুদ রয়েছে ২৫ হাজার ৫৪৭টি, হাটহাজারীর ৫৫০ খামারে গরু রয়েছে ২৬ হাজার ৮১টি, রাউজানের ৪৩০ খামারে গরু আছে ২৩ হাজার ৮৮৬টি, রাঙ্গুনিয়ার ৩৯৮ খামারে গরু রয়েছে ২৬ হাজার ১৯২টি, বোয়ালখালীতে ৪৬৬ খামারে গরু মজুদ রয়েছে ২৭ হাজার ৫৭৪টি, পটিয়ার ৯০৭ খামারে গরু আছে ৪০ হাজার ৩৬২টি, সাতকানিয়ায় ৩৯৮ খামারে গরু রয়েছে ২৫ হাজার ৩৮৩টি, বাঁশখালীতে ২০৪ খামারে গরু রয়েছে ২০ হাজার ৪৮৮টি ও লোহাগাড়ার ৭৪১ খামারে ২৬ হাজার ৩৭১টি গরু মজুদ রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকার খামারি হাজী মো. নাছির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার খামারে গরু মোটাতাজাকরণে ভুসি, খড়, খৈল, নালী ও ঘাসই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইনজেকশন কিংবা ট্যাবলেট এই খামারে নিষিদ্ধ। একেকটি গরু ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। তবে আমাদের ভয় ভারতের গরু নিয়ে। ঈদে ভারত থেকে গরু আসলে আমাদের মাথায় হাত পড়বে। বিষয়টি সরকারকে দেখা উচিত।’
এমবিআর/আরআইপি