সড়ক পরিবহন আইন কাঁচাভাবে তৈরি : হোসেন জিল্লুর রহমান

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৩৫ এএম, ০৬ আগস্ট ২০১৮

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-তে বেশ কিছু চিহ্নিত ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে। আইনটি কিছু কাঁচাভাবে তৈরি করা হয়েছে বলা যায়। রোববার (৫ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রোড সেইফটি অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এ্যালায়েন্সের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘এ আইনটি করতে গিয়ে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে গেছে। এ আইনের শিরোনাম নিয়েই ঘাটতি আছে। এটার শিরোনামটা ঠিক করতে হবে। শিরোনামে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নামটি না থাকলে এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য জনমনে পরিষ্কার হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় জানমালের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতি আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি স্বরূপ। সুতরাং পরিবহনের সাথে ‘নিরাপত্তা’র বিষয়টি আইনের সকল বিধানের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। তাই আইনটির শিরোনাম ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর পরিবর্তে ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ হওয়া উচিত।’

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান জানান, খসড়া আইনে কিছু টেকনিক্যাল টার্ম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে যাদেরকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ ধারা ৪৪-এ মহাসড়কের ও ধারা ২৬ (৫)-এ রঙচটা, বিবর্ণ, জরাজীর্ণ কিংবা ঝুকিঁপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ইত্যাদি।’ আইনগত ব্যাখ্যার সুবিধার্থে ধারা ২-এ এ টার্মগুলোর সংজ্ঞা প্রদান করা জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া সরকার ও যাত্রী সাধারণের অংশগ্রহণে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠন করতে সুপারিশ করেন তিনি।

তিনি যাত্রী ছাউনি, ওভারপাস, আন্ডারপাস, জেব্রাক্রসিং, বাস স্টপেজ, ফুটপাত, বাস টার্মিনালের স্থান নির্ধারণ, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটিতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও যাত্রী প্রতিনিধিত্বের বিধান অর্ন্তভুক্ত করার প্রস্তাব করেন এবং সড়কে চালক ও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বিশ্রামাগার নির্মাণ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো প্রণয়ন করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা মামলার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত তদন্ত প্রয়োজন। কারণ, এই তদন্ত প্রক্রিয়া অন্যান্য ফৌজদারি মামলার তদন্ত থেকে ভিন্ন। এখানে কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক সহায়ক যন্ত্রপাতি, বিশেষায়িত পদ্ধতি ও দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।’ সড়ক পরিবহন আইনের উপর প্রণিতব্য বিধিমালায় দুর্ঘটনা মামলা তদন্ত প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তকরণের সুপারিশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘দেশে দ্রুত নগরায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন খাতের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও নিয়ন্ত্রিত বিকাশের স্বার্থে আধুনিক নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজন। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনা এক নতুন মহামারি হিসেবে জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে।’

তিনি দ্রুত ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে একটি ক্ষতিপূরণ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান এই আইনে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহতদের সাহায্যকারীগণের আইনগত সুরক্ষা করে একটি পৃথক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন। এছাড়া সকল পরিবহন স্থাপনা নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব করার বিধান রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচএস/এসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।