এখন ঢাকার রাজা রিকশাওয়ালা

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ০৪ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় টানা সপ্তম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষেরা। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অনেকে ছুটছে পায়ে হেঁটে আবার অনেকে রিকশাযোগে।

রিকশাওয়ালাদের এখন যেন ঈদের দিন। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া ছাড়া কোনো কথাই বলছেন না তারা। পছন্দের জায়গা ছাড়া যেতেও চায় না অনেকে। এক এক রিকশাওয়ালা এখন দিনে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করছেন। আগে যেখানে তারা দিনে আটশ থেকে এক হাজার টাকা আয় করতো। ঢাকার সড়ক পথের রাজত্বে এখন তারা।

খান বাহাদুর। রামপুরায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। নিয়মিত গুলিস্তান থেকে অফিস যাতায়াত করেন তিনি। শনিবার সকাল ৯টা থেকে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের সামনে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রিকশা ভাড়া করলেন। রিকশা ভাড়া দুইশত টাকা। যেখানে তিনি আন্দোলনের আগে একশত টাকায় রামপুরায় আসতেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন রিকশাওয়ালাদের রাজত্ব চলছে। কোনো গাড়ি না থাকায় তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। দুই থেকে তিনগুণের বেশি ভাড়া আদায় করছে তারা। আমরা এখন অসহায়। বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।

ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয় রিকশাচালক মানিক সর্দার বলেন, ভাড়া চাহিদা বেশি। সুযোগ তো সব সময় আসে না। তাই একটু বেশি ভাড়া নিচ্ছি। আগে যেখানে রিকশা চালিয়ে আয় হতো আটশ থেকে এক হাজার টাকা। এখন সেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

খান বাহাদুরের মতো আরেক জন জামাল উদ্দিন। তিনি পল্টন মোড় থেকে রিকশা করে মালিবাগ যাচ্ছেন। রিকশা ভাড়া ঠিক করলেন ৬০ টাকা। যেখানে তিনি আগে যেতেন ৩০ টাকায়।

তিনি বলেন, ভাই এখন আমরা অসহায়। গাড়ি নেই। পায়ে হেঁটে যাওয়াও অসম্ভব। তাই বেশি ভাড়ায় যেতে হচ্ছে।

রিকশা চালক জালাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক সময় রাস্তা আটকে দেন। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগে গন্তব্য পৌঁছাতে। এছাড়াও এখন ভাড়ার চাহিদাও বেশি।

রাজাধানীর গুলিস্তান, পল্টন, শান্তিবাগ, রামপুরা ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা দেখা যায়, সড়কে দুই একটা বিআরটিসির বাস ছাড়া অন্য কোনো বাস চলছে না। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বা রিকশা যোগে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে গন্তব্যের দিকে ছুটছে। আবার কেউবা পায়ে হেঁটে ছুটছে। মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থীর প্রাইভেটকারের লাইসেন্স চেক করছে। রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী।

জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই সহযোগীকে আটক করেছ র‌্যাব-১। এর মধ্যে চালক মামুস বিল্লাহ ও মালিক শাহাদাত হোসেনকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বাকি চার জনের রিমান্ড শুনানির জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য রয়েছে।

জেএ/এমআরএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।