যাত্রীর চাপ বেড়েছে রেলস্টেশনে
শত ভোগান্তির মুখোমুখি হয়ে রাজশাহী থেকে সকালে ঢাকায় পৌঁছেছিলেন ডা. তোফাজ্জল হোসেন। ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার অংশ নিতে তিনি গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও ভোগান্তি নিয়েই ঢাকায় আসেন। শুক্রবার (৩ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর ২৫টি কেন্দ্রে শুধুমাত্র চিকিৎসকদের জন্য এই বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল থেকে সারাদিন রাজধানীতে গণপরিবহন না থাকার বিড়ম্বনা নিয়ে চলাচল করেন তিনি। পরীক্ষা শেষে কিছুটা হেঁটে ও রিকশাযোগে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছান। কাউন্টারে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর জানতে পারেন, আসন শেষ। বাধ্য হয়ে পরবর্তী স্ট্যান্ডিং টিকিট কেনেন তিনি।
ডা. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দূরপাল্লার বাসও বন্ধ তাই কমলাপুর স্টেশনে এত ভিড়। যেন সব যাত্রীর চাপ এসে পড়েছে কমলাপুর স্টেশনে। স্টেশনে এত মানুষের ভিড় শুধু ঈদের টিকিট কাটার সময় দেখা যায়। যে কারণে আমি টিকিট পাইনি, বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
শুধু ডা. তোফাজ্জল হোসেনেই নয়, স্টেশনে গিয়ে এমন অনেক যাত্রীই আসনসহ টিকিট পাননি। কারণ, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ অজুহাতে রাজধানীতে বন্ধ গণপরিবহন। একই কারণে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকেই তারা নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত তুলে অঘোষিত ধর্মঘটে নেমেছিলেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীদের। যে কারণে রেলস্টেশনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ তৈরি হয়।
এদিকে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মোট ৩৯ হাজার ৯৫৪ জন প্রার্থীর পরীক্ষা ছিল ঢাকায়। ফলে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে এই পরীক্ষার্থীদেরও আসতে হয়েছে ঢাকায়। যাদের সিংহভাগই দূরপাল্লার বাস ঠিকমতো চলাচল না করায় রেলযোগে ফিরতে স্টেশনে ভিড় করেছেন।
কমলাপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিট পাননি চাটমোহরগামী যাত্রী দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সড়কে বাস চলছে না, তাই ট্রেনে যাত্রীদের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্টারে টিকিট প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন। বেশিরভাগ ট্রেনেরই টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এখন ভরসা স্ট্যান্ডিং টিকিটি। এছাড়া প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই অসংখ্য যাত্রীর ভিড়। সড়কে যেহেতু বাস নেই তাই বাধ্য হয়ে এভাবেই ট্রেনে যেতে হচ্ছে।’
কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নজরুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘আমি যাব এয়ারপোর্ট স্টেশন, উত্তরাতে আমার বাসা। কয়েকদিন ধরে বাস চলছে না। যে কারণে খিলক্ষেত, উত্তরা, টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার লোকজন সবাই ট্রেনে যাতায়াত করছে। তাই যে কোনো একটি ট্রেন আসা বা যাওয়ার সময় পুরো ট্রেনের কোথাও পা ফেলার জায়গা থাকছে না।’
কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দূরপাল্লার সড়কেও যানবাহন কম বা বন্ধ থাকায় ট্রেনে অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। প্রতিটি রুটের ট্রেনেই অন্যান্য সময়ের চেয়ে যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকছে।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হেলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে 'সড়কে এখন বাস চলাচল নিরাপদ নয়' এমন কারণ দেখিয়ে ঢাকা শহরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। সড়কে চলছে তাদের অঘোষিত ধর্মঘট। একই কারণে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মালিক-শ্রমিকরা স্ব উদ্যোগে গাড়ি বন্ধ রেখেছে। পরিবহন মালিক সমিতি বা শ্রমিক সংগঠনগুলোর আনুষ্ঠানিক কোনো ধর্মঘট নেই।’
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় আন্দোলন করেছেন দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
জাবালে নূরের পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এর আগে নিহত মিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এএস/এসআর