রিকশার দখলে মিরপুর, ভাড়া দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪৯ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৮

আজ শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবুও সকাল থেকে কাজ বের হওয়ার মানুষের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েকদিন ধরে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানীতে কোনো ধরনের গণপরিবহন চলাচল করেনি। ফলে কাজে বের হয়েও অনেকেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য বা কাজে যেতে পারেননি। তারা ধারণা করেছিরেন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গণপরিবহন চলাচলে আর বাধা থাকবে না।

কিন্তু সকালে যারা কাজে বের হয়েছেন তারা পড়েছেন মহাবিপদে। কারণ বিগত কয়েকদিনের মত আজও রাজধানীতে কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না। সকাল ৯টায় মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোনো গণপরিবহন চলছে না। যদিও দুপুর ১২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি এই এলাকায়।

গণপরিবহন চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কাজ বের হওয়া সাধারণ মানুষ। আর এর সুযোগ নিয়েছেন রিকশা চালকরা। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া চাচ্ছেন। বনিবনা না হলে সোজা সাপটা জানিয়ে দিচ্ছেন 'যাবো না'। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কাজ বের হওয়া মানুষদের।

মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্করে দাঁড়ানো শত শত মানুষ, কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে কোনো গণপরিবহন পাচ্ছেন না। তবে সব মোড়েই রয়েছে অসংখ্য রিকশা। পুরো মিরপুর এলাকা রিকশার দখলে। সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে ফাঁকা রাস্তায় দাপিয়ে ট্রিপ মারছেন তারা। এছাড়া বেশ কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশাও চলাচল করছে, তারাও গণপরিবহন না থাকার সুযোগে যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়া আদায় করছেন।

Mirpur-2

ব্যক্তিগত জরুরি কাজে মিরপুর থেকে বাংলামোটর যেতে হবে হামিদুর রহমানকে। রিকশার ভাড়া নিয়ে দরদাম করতে করতে তিনি ক্লান্ত। কোনো রিকশাই দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি ভাড়া ছাড়া যাবে না। তিনি বলেন, অন্য সময় ফার্মগেট পর্যন্ত রিকশা ভাড়া দিতাম ৬০/৭০ টাকা। এখন কমপক্ষে ১৫টা রিকশা চালককে বলেছি। কেউ যাবে না। কেউ কেউ যেতে রাজি হলেও ভাড়া চাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।

অন্যদিকে রিকশা চালক এরশাদ আলীকে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়া যাওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, ‘অল্প দূরত্বে যাবো না। বেশি ভাড়ায়, দূরে যাবো। শেওড়াপাড়া গেলে ৭০ টাকা ভাড়া লাগবে।’ অথচ অন্য সময় এই দূরত্বে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ ভাড়া ৩০ টাকা বলে জানান উপস্থিত অন্য যাত্রীরা।

রিকশা চালক এরশাদ আলী বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ি নেই, মানুষ আমাদের রিকশাতেই যাচ্ছে। আমরাও ট্রিপ বেশি মারছি, পরিশ্রম বেশি তাই ভাড়াটা একটু বেশি নিতে হচ্ছে। অন্য সব সময়ই তো স্বাভাবিক ভাড়াতেই যাই। আজ না হয় একটু বেশিই দিলেন!’

'সড়কে এখন বাস চলাচল নিরাপদ নয়' এমন কারণ দেখিয়ে ঢাকা শহরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। চলছে অঘোষিত ধর্মঘট।

Mirpur-3

এদিকে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সড়কে বাস বন্ধ করার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে যে পরিস্থিতি দেখলাম, অনেক ভাঙচুর চলেছে। সড়কে বাস নিরাপদ নয়। তাই মালিকরা নিজ নিজ ইচ্ছায় বাস বন্ধ রেখেছে।’

উল্লেখ্য গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব। এছাড়া আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবারও পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করেছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।

জাবালে নূরের পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। তার আগে নিহত মিমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এএস/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।