কথিত ভিআইপিদের কারণে সিএনজি পাম্পে চরম ভোগান্তি
রাজধানীর বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ গাড়ি চালকরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে গ্যাস না পেলেও এক শ্রেণির কথিত ভিআইপি পরিচয়ে লাইনের তোয়াক্কা না করে উল্টো পথে গাড়ি ঢুকিয়ে স্টেশন কর্মচারীদের গ্যাস দিতে বাধ্য করছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাধারণ গাড়ির মালিক ও চালকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কথিত এ সকল ভিআইপিদের কারণে দীর্ঘ সময়ে লাইনে দাঁড়িয়েও যথাসময়ে গাড়ির গ্যাস নিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন। উল্টো পথে গাড়ি প্রবেশ করার ফলে ভিতরে থাকা গাড়ি বের হতে পারছে না। এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ গাড়ির মালিক ও ড্রাইভাররা অপমান অপদস্ত হচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সিএনজি পাম্পের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন পাম্প থেকে মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ছাত্রনেতাদের জন্য ভিআইপি কার্ড ইস্যু করা হয়। জরুরি প্রয়োজনে তারা ইস্যুকৃত কার্ড দেখিয়ে লাইনে না গিয়ে গ্যাস সংগ্রহের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সিএনজি পাম্প মালিক-কর্মচারীরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কার্ডধারী ভিআইপির বাইরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতা ও তাদের ক্যাডার পরিচয়ে কথিত ভিআইপিদের অত্যাচারে তারা সব সময় তটস্থ থাকছেন। ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হলে কর্মচারীদের তারা মারধর করছেন। অনেক সময় অস্ত্র বের করে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে এমনকি সিএনজি স্টেশনে দলবল নিয়ে এসে ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা আজমত আলী ছয় বছরের মেয়ে ফারিহাকে সাথে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বাসা থেকে বের হন। সকাল ৮টার মধ্যে মেয়েকে সায়েন্স ল্যাবরেটরির অদূরে ওয়াইডব্লিইসিএ স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরে আসবেন এমনটা ভেবেই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। পথে শাহবাগের অদূরে গাড়িতে সিএনজি নিতে দীর্ঘ লাইনে গাড়ি দাঁড় করান।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আজমত আলী জানান, রুপসী বাংলা হোটেলের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পরেও যখন গ্যাস পাম্পের সামনে আসতে পারছিলেন না তখন সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পান, ভিতরের তিনটি লাইন থেকে গ্যাস নিয়ে গাড়ি যেদিক দিয়ে বের হবে সেদিক দিযে ৪/৫টি গাড়ি প্রবেশের ফলে ভিতরে জটলার সৃষ্টি হয়েছে। ভিতরে জায়গা কম থাকায় উল্টোদিক থেকে যে গাড়িগুলো প্রবেশ করেছে সেগুলো গ্যাস নিতে পারছে না আবার তাদের কারণে অন্য গাড়িগুলোও বাইরে বের হতে পারছে না।
আজমত আলী সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বলেন, ওরা ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার ভিআইপি। ওদের কিছু বললে দলবল নিয়ে এসে স্টেশন ভাংচুর করবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ওদের ভয় পায়। সুতরাং তার পক্ষে ওদের কিছু বলা সম্ভব নয়।
আজমত আলী জানান, কথিত ওই ভিআইপিদের কারণে দেরী হওয়ায় সেদিন তার মেয়ের স্কুলে আর যাওয়া হয়নি। শুধু আজমত আলীই নয়, কথিত ওই ভিআইপি গাড়ির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সিএনজি পাম্পে গ্যাস নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হেনস্থা ও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জিগাতলার বাসিন্দা মনসুর হোসেন নামে একজন গাড়ির মালিক জানান, পৃথক কোন লোগোর ব্যবস্থা না থাকায় ভিআইপি গাড়ি কোনগুলো তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু সিএনজি পাম্পের কর্মচারীরাও নগদ টুপাইস পেয়ে অনেক গাড়িকে ভিআইপি গাড়ি বলে চালিয়ে দেন। এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে ভিআইপিদের গাড়িতে বিশেষ লোগো লাগিয়ে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
এমইউ/এআরএস