হজযাত্রীদের সঙ্গে জুমার নামাজে আত্মীয় ও স্থানীয় মুসল্লিরা
চলো চলো। আর বেচাকেনা নয়। জুমার নামাজ পড়বো হজক্যাম্পে। আল্লাহ’র ঘর কাবা’র আত্মীয়দের (হজযাত্রী) সঙ্গে জুমার নামাজ পড়তে হবে। এভাবেই দোকানের কর্মচারী ও নিজের সন্তানকে নিয়ে জুমার নামাজ পড়তে বেরিয়ে পড়েন রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্প এলাকার মুদি দোকানদার আব্দুস সবুর মিয়া।
হজক্যাম্পে শুক্রবার জুমার নামাজের আগে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, প্রতিদিন হজযাত্রীরা হজে যাচ্ছেন। অনেকের সামর্থ্য থাকলেও হজে যাবার ভাগ্য সবার হয় না। হজযাত্রীরা আল্লাহ’র মেহমান। তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে পারাটা সত্যিই ভাগ্য বলেই মনে করি।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) দুপুরে একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন হজক্যাম্পে উপস্থিত হাজারো হজযাত্রী। হজযাত্রীদের সঙ্গে নামাজে অংশ নেন আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় মুসল্লিরা। নামাজ শেষে হজযাত্রীদের সুস্বাস্থ্য কামনা, হজ কবুল ও গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করেন মুসল্লিরা।
হজক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, হজযাত্রীদের সঙ্গে জুমার নামাজ পড়তে স্থানীয় মুসল্লিদের ঢল নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হজযাত্রীদের আত্মীয়-স্বজন, ঢাকায় বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় সাধারণ মুসল্লিরা হজক্যাম্পে আসেন।
রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকার বাসিন্দা আবরার রহিম এসেছেন স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘শ্বশুর হজে যাচ্ছেন। বাড়িতে মিলাদ হয়েছে যেতে পারিনি। ঢাকাতেই থাকি। আর ঢাকা থেকেই শ্বশুরের হজ ফ্লাইট। গতকাল তিনি হজক্যাম্পে এসেছেন। আজ রাতে ফ্লাইটে যাচ্ছেন শ্বশুর। সে কারণে স্ত্রী কণ্যাকে নিয়ে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। এখানেই নামাজ পড়লাম।
সবুজ মিয়া নামে এক স্থানীয় ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী বলেন, ব্যস্ততার কারণে মহল্লার মসজিদেই নামাজ পড়ি। কিন্তু এবার নিয়ত করছিলাম হজক্যাম্পে হজযাত্রীদের সঙ্গে নামাজ পড়ব। সে ইচ্ছা আজ পূরণ হয়েছে। জুমার নামাজ হজক্যাম্পে আদায় করতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। কবে আল্লাহ আমাকে কবুল করবে হজযাত্রী হিসেবে, বলা তো যায় না।
রংপুর মডার্ন এলাকা থেকে এসেছেন সাবেক আর্মি অফিসার আবু তালেব। স্ত্রী ও মেয়ে-জামাইসহ হজে যাচ্ছেন তিনি। সেজন্য সকাল থেকেই ভিড় লেগেছে আত্মীয়-স্বজনের।
হজযাত্রী আবু তালেব বলেন, আল্লাহ’র রহমতে হজে যাচ্ছি। আত্মীয়-স্বজনরা আসছেন। একসঙ্গে জুমার নামাজ পড়লাম। ঢাকাস্থ ঘনিষ্ট বন্ধুরাও দেখা করেছে। তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি, দোয়া করতেও বলেছি। তারাও দোয়া চেয়েছেন। আসলে আমরা সবাই উপলক্ষ মাত্র, ক্ষমা করার মালিক তো আল্লাহ।
ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক মক্কা থেকে প্রকাশিত হজ বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৫৭ হাজার ৩৯১ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী। বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনার ৩ হাজার ২২৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৫৪ হাজার ১৬৫ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৮০টি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৭৯টি ফ্লাইটসহ মোট ১৫৯টি ফ্লাইট এসব হজযাত্রী পরিবহন করা হয়।
হজক্যাম্পের আইটি বিভাগের ইনচার্জ কাজী মো. মুরাদে আলম জাগো নিউজকে জানান, এবার বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন। এ বছর বাংলাদেশ বিমানে যাবেন মোট ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী, এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৭ হাজার ১৯৮ জন। অবশিষ্ট ৫৬ হাজার ৪০১ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
তিনি বলেন, যাত্রীবহনের জন্য আগেই ঠিক করে রাখা হয় বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৮৭টি ফ্লাইট ৬৪ হাজার ৯৬৭ জন এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের ১৮৮টি ফ্লাইট ৬১ হাজার ৮৩১ জন যাত্রী পরিবহন করবে।
হজের শেষ ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে ১৫ আগস্ট। আর হজ পালন শেষে ২৭ আগস্ট প্রথম ফিরতি ফ্লাইট জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
জেইউ/জেএইচ/পিআর