এমপি মোস্তফা রশিদী সুজা আর নেই
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন খুলনার বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবর রাত ১১টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এমপি সুজার ভাই এস এম মোর্তজা রশিদ গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বর্ষীয়ান এই আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে শোকে কাতর তার নির্বাচনী এলাকা খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) সহ পুরো খুলনাবাসী।
এদিকে এমপি সুজার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মো. নূরুল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন এমপি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকুও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা দীর্ঘদিন কিডনী রোগে ভুগছিলেন। সম্প্রতি শ্রমিক লীগ নেতা আলম হাওলাদারের দেয়া কিডনী প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে আসেন এই প্রবীন রাজনীতিবিদ। এরপর তিনি আবারও অসুস্থ গত ১৮ জুলাই আবার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ বলেন, সুজার একমাত্র ছেলে এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ন বাবার মরদেহ আনতে শুক্রবার সকালে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সেখান থেকে কবে নাগাদ মরদেহ দেশে আসবে সেটি সুকর্ন সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তারপর জানাজা ও দাফনের সময় জানানো হবে।
প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ বাগেরহাটের ফকিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম পৌর কমিশনার নির্বাচিত হন। একই সময়ে বর্তমান কেসিসি মেয়রও পৌর কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে খুলনা-২ থেকে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচন করেন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই জননন্দিত নেতা। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
২০০২ সালে যৌথ বাহিনীর ক্লিনহার্ট অপারেশনের সময় গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা। ২০০৭ সালে
তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার নামে মামলা দিলে প্রবাস জীবন কাটান তিনি, যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। পরে ওই মামলায় তিনি হাইকোর্ট থেকে খালাস পান।
১৯৭২ সালে শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়াচক্র গঠন করেন। মোস্তফা রশিদী সুজা এই ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি ইলিয়াস চৌধুরির মৃত্যুর পর তিনি আবাহনী ক্লাবের সভাপতি হন।
তিনি একজন নাট্য অভিনেতাও ছিলেন। ছিলেন খুলনা নাট্য নিকেতনের সভাপতি। তেরখাদার চিত্রা মহিলা কলেজ, দিঘলিয়ার মোস্তফা রশিদী সুজা মহিলা কলেজ, রূপসা মহিলা কলেজ সহ অসংখ্য মাদ্রাসা, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।
আলমগীর হান্নান/এমবিআর/এমএস