শিক্ষার্থী পাচ্ছে না প্রাইভেট ডেন্টাল কলেজগুলো


প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০১৫

নিদারুণ শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে দেশের ১৮টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ। গত বছর সরকার বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় ৬৬ হাজারেরও বেশি প্রার্থী অংশগ্রহণ করলেও ১৮টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে নির্ধারিত সহস্রাধিক আসনে ভর্তি হয়েছে মাত্র ১৩০ জন শিক্ষার্থী।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম হওয়ায় এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধুমাত্র ডেন্টাল কলেজের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে ৩০ নম্বর করে দেয়। পাসমার্ক ১০ নম্বর কমিয়ে দেয়ার পরও শেষ পর্যন্ত সব ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৪৯৬ জন অর্থাৎ শতকরা ৫০ ভাগের কম শিক্ষার্থী ভর্তি করা সম্ভব হয়।  

এমনই এক প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের পৃথক ভর্তি পরীক্ষার দাবি উঠেছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির নব নির্বাচিত নেতারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে এ দাবি জানান।

তারা সভায় তাদের উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়টি মিটিং মাইনিউটসে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানান।

তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দেশে পেশাদার ও মানসম্মত ডেন্টাল চিকিৎসক তৈরির সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

একসঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ফলে প্রায শতভাগ শিক্ষার্থী শুধুমাত্র মেডিকেল কলেজে ভর্তির পূর্বমানসিকতা (মাইন্ডসেট) নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুসংখ্যক সরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির নব-নির্বাচিত মহাসচিব ও সরকারি শহীদ সোহরোওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট প্রধান ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল বলেন, এক সময় ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা আলাদাভাবেই অনুষ্ঠিত হতো। বছর চার-পাঁচেক আগে থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে বর্তমান সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দেশে পেশাদার ডেন্টাল সার্জন তৈরি হতে পারছেননা। শিক্ষার্থীরা ডেন্টাল কলেজে পড়ার জন্য আগ্রহী হচ্ছেনা।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করে ডা. বুলবুল বলেন, মেডিকেল কলেজের ন্যায় ডেন্টাল কলেজেও পাস নম্বর ৪০ রাখলে তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু দেশে পেশাদার ডেন্টাল সার্জন তৈরি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন)  আইয়ুবুর রহমানের সভাপতিত্বে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ভর্তি সংক্রান্ত এক সভায় আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের  পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একযোগে নেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে অবস্থান করায় তিনি দেশে ফিরে আসলে পরীক্ষার চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ করার কথা ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির কর্মকর্তারা দাবি জানালেও চলতি বছর  থেকে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে দেশের বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলো নিদারুণ শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে ১টি ডেন্টাল কলেজ ও ৮টি ডেন্টাল ইউনিট এবং বেসরকারি পর্যায়ে ১৮টি ডেন্টাল কলেজ রযেছে। ৯টি সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে আসন সংখ্যা ৫৩২ ও ১০৬৫টি।

এমইউ/এসএইচএস/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।