গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বন্ধে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অভিযোগ
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ওধুষ কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ’র চট্টগ্রামের কারখানা বন্ধ করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ‘গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন ঘিরে সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক এবং তাদের পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৩৫১ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার ঢাকা। এ সময় জাতীয় রাজস্ব খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন।
এমন একটি লাভজনক শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার জন্য দেশি-বিদেশি নানা স্বার্থন্বেষী মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের তৎপরতার ফলশ্রুতিতে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশের কারখানায় তাদের উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্য বিপণন ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
‘প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে’ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘আমাদের ধারণা, বিদেশি পরিচালক (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ চক্রান্তের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বর্তমানে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশি হলেও আগে একজন পাকিস্তানি নাগরিক এ দায়িত্বে ছিলেন। বিগত দুই বছর ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে।’
প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার তৎপরতা আড়ালের জন্য বছর দুয়েক আগে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কারখানা আধুনিকায়ন ও কমপ্লায়েন্সের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। ব্যবসা রিভিউয়ের নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের দিকে ক্রমন্বয়ে এগিয়ে যায়।‘
কোম্পানির ব্যবসা রিভিউ করতে গঠন করা কমিটি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এ বিষয়ে বলা হয়, ‘কোম্পানি ব্যবসা রিভিউয়ের জন্য যে কমিটি করেছে তার অধিকাংশ সদস্য বাইরের দেশের। তারা গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ব্যবসা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে স্থানান্তরের লক্ষ্যে এটি বন্ধের অপচেষ্টায় রয়েছেন।’
‘এ ষড়যন্ত্র কার্যকরের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যে কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি হ্রাস করেছেন এবং উৎপাদিত অনেক ওষুদের চাহিদা বাজারে থাকলেও তা বাজারজাত না করে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। ওষুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিককে বিনা কাজে বসিয়ে রাখা হয়েছে।’
গ্ল্যাক্সোস্মিথের কারখানা বন্ধের পাইতারা রুখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। যেহেতু এখানে সরকারের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আছে, সেহেতু সরকার কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অন্ধকারে রেখে চট্টগ্রামের কারখানা বন্ধ করে দেয়ার একতরফা এখতিয়ার গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কোম্পানির থাকতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্ল্যাক্সাস্মিথক্লাইন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াস, সধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আজম, সহ-সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, কল্যাণ সম্পাদক মো. হাসান প্রমুখ।
এমএএস/এমএআর/জেআইএম