‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই সংস্কার’

আমানউল্লাহ আমান
আমানউল্লাহ আমান আমানউল্লাহ আমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৫ এএম, ২৪ জুলাই ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোটা সংস্কার হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে দরকার হলে অন্যান্য কোটা সংস্কার করা যেতে পারে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় উপস্থিত দলটির একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নেতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সভায় কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনার সূত্রপাত করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, নেত্রী এই ইস্যুটির সমাধান হওয়া উচিত। এ আলোচনায় অংশ নেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি কীভাবে সমাধান করবো? আমি তো মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার পক্ষে। ২০০১ সালে আমাকে বিশ্বব্যাংক যে প্রস্তাব দিয়েছিল তা মানলে আমি ক্ষমতায় আসতে পারতাম। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপস করলে আমার রাজনীতি করার দরকার কী?

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য স্বাধীনতাবিরোধীরা পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন করাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে একচুলও ছাড় দেয়া হবে না। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর তালিকা করে তারা যেন কোনো সুযোগ-সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের দুর্বলতা আছে। আমরাও এ আন্দোলনের শুরু দিকে আন্দোলনকারীদের সুরে কথা বলেছি। শুরু থেকেই স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবী, নারী, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন অনগ্রসর অংশের মানুষ সক্রিয় হলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমাদের এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা আজকে মাঠ দখল করে আছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলন ঠেকানোর জন্য সংগঠনের একটি অংশ এ আন্দোলনে ইন্ধন দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবেই। মুক্তিযোদ্ধারা আগে পশ্চাৎপদ ছিল, তাদের পরিবারকে সামনে আনা হয়েছে। তাই এ কোটা থাকবেই।

যে রাজাকারের তালিকা বঙ্গবন্ধু করেছেন তার আলোকে রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের তালিকা করে তাদের পরিবারের কেউ যেন সুযোগ-সুবিধা না পায় সেটার দিকে নজর দেয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় কোটা সংরক্ষণ নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় ও সরকারের গঠিত কমিটির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করছে। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে, কোটা বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সেটা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাদ দেয়া যাবে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে দরকার হলে অন্যান্য কোটা সংস্কার করা যেতে পারে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই আগামী নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, শোকের মাসের পর সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আমি বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবো। সেখানে মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তফসিলের আগেই প্রার্থীদের সিগন্যাল দিয়ে দেয়া হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও সভায় আলোচনা হয় বলে সভার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সভাসূত্রের দাবি অনুযায়ী, সভায় বলা হয় কারাগারে কারাবিধির বাইরেও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া অথচ আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় আসলেই বলা হচ্ছে তিনি অসুস্থ।

জানা গেছে, সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে কিছু পদ খালি আছে সে বিষয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি জামালপুরের অনুষ্ঠিত সংগঠন মেলা সম্পর্কে বলেন, সেখানে আবুল কালাম আজাদ সাহেবের লোকজনকে ডাকা হয়নি। ওনার বিরুদ্ধের লোকজনকে ডাকা হয়েছে।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি কি জামালপুরে বসে বসে তোমার প্রার্থী দিচ্ছ না কি?

প্রতিউত্তরে মির্জা আজম বলেন, নেত্রী প্রার্থী তো আপনি দেবেন।

জানা গেছে, বৈঠকে কয়েকটি জেলার দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে। এ সময় বিভেদ মিটিয়ে ফেলে নির্বাচনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

বৈঠকে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারছেন না বলে কিছু বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা আবেদন করেছে তাদের বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে। নতুন কমিটি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে যারা আছে তাদের সঙ্গে আমি দ্রুত বসবো।

এইউএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।