যে কারণে কক্সবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ চায় র্যাব
কক্সবাজার হতে মাদকের চোরাচালান ও মাদকের লেনদেন ঠেকাতে দুই মাসের জন্য কক্সবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন পুলিশের এলিটফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেছেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে কক্সবাজারে শতকোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। কক্সবাজারে চোরাচালানের এ লেনদেন বন্ধ করা গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এ প্রস্তাব দেন তিনি।
প্রস্তাবের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই এলাকায় মাত্র ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে। কিন্তু প্রতিদিন এখানে কোটি টাকার লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এটি কী করে সম্ভব? যেখানে বিশেষ শিল্প কারখানা নেই, বড় ব্যবসাবাণিজ্যও নেই। মাদক ব্যবসায়ীদের টাকা এখানে লেনদেন হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মাদকের চোরাচালান কমে আসবে।
র্যাব কর্তৃক নির্মিত মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ প্রচারানুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় রোববার। এদিন বিকেল সাড়ে ৪ টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং বিভাগ।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের সফলতা ও কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরেন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছরে ৮০ হাজার মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বছরের ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয়। গত ৮০ দিনে ১০২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য জব্দসহ প্রায় ১০ হাজার লোককে মাদক সংশ্লিষ্টতায় গ্রেফতার করেছে র্যাব।
‘অভিযানকালে ৫ হাজার ৮৭৭ জনকে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ অাদালত। এর বাইরে ১ হাজার ৭১৩টি নিয়মিত মামলায় ২ হাজার ৯৫৯ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৮ জনকে ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে,’- জানান তিনি।
র্যাব ডিজি বলেন, ‘গত ৮০ দিনে ১ হাজার ৭৯১টি মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এসব অপারেশনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৪৭ জন মাদকব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানের পরও মাদক আসছে। আমরা মাদক ধরতে অভিযান পরিচালনা করছি। গত ১ সপ্তাহে ১১টি দূরপাল্লার বাস জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি। এক্ষেত্রে বাস মালিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা শিগগিরই বাস মালিকদের সঙ্গে বসবো। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাবো।’
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের এনফোর্সমেন্ট মাদকের সাপ্লাই ডিটেকশনে কাজ করছে। কিন্তু যদি সাপ্লাই ডিমান্ড যদি বন্ধ করা না যায়, তবে মাদক নির্মূল সম্ভব না। এ জন্য মাদকবিরোধী প্রচারণার পাশাপাশি কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।
জেইউ/জেডএ