‘অনুরোধ একটাই, হজ ফ্লাইট যেন সময়মতো ছাড়ে’
* পুলিশ স্কাউট আনসার সদস্যরা আন্তরিক
* ক্যাম্পে স্বাচ্ছন্দ্যে হজযাত্রীরা
* আরও কোনো আক্ষেপ নেই
কেউ ইহরাম বাঁধছেন, কেউ নফল নামাজ পড়ছেন, কেউ কেউ প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। ক্যাম্পের আবহাওয়া একটু উষ্ণ, অতিরিক্ত হজযাত্রী আর স্বজনদের জন্য ভিড়টাও বেশি। দু-একজনের কাছ থেকে কিছু বিষয়ে অভিযোগ বা পরামর্শ পাওয়া গেলেও কারও মুখেই কোনো আক্ষেপ নেই। প্রস্তুতি সেরে লাব্বায়েক ধ্বনিতে সবাই রওনা হচ্ছেন বিমানবন্দরের দিকে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীতে আশকোনার হজ ক্যাম্পে দেখা যায়, হজের আগের কাজ খুব স্বাচ্ছন্দ্যে সারছেন যাত্রীরা। ক্যাম্পের মূল ফটকের বাইরে লাগেজ নিয়ে হজযাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র চোখে পড়ে।
ক্যাম্পের ভেতরে ঢোকার দুটি আর্চওয়ে গেটের বাইরে ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ। ভেতরের দিকে স্কাউট সদস্যরা। প্রতিবছরের মতো এবারও তিন শিফটে হজযাত্রীদের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করছে রোভার স্কাউটের সদস্যরা। মূল গেট, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, লিফট, সিঁড়ি, রাত যাপনের স্থান, ইমিগ্রেশন ও চেক-ইনের গেটসহ বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাদের। এই স্কাউটের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, কাজ হিসেবে নয়, আন্তরিকতা থেকেই হজযাত্রীদের সেবা দিতে এসেছেন তারা।
হজযাত্রীদের সহযোগিতার অভিজ্ঞতা কেমন? জানতে চাইলে স্কাউট সদস্য মোহাম্মদ আসিফ বললেন, ‘স্কাউট চিন্তা, কথা ও কাজে নির্মল।’ এখানে দায়িত্বরত প্রতিটি সদস্য এই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। আমাদের কাজগুলো খুব বড় নয়। যেমন- যাত্রীদের লিফটে যেতে সহায়তা করা, ওযুখানা-মসজিদের ও টয়লেটের পথ দেখানো, লাইন ঠিক রাখা ইত্যাদি। এখানকার সব সদস্য আন্তরিকতার সঙ্গে এসব কাজ করে থাকেন। হজযাত্রীদের ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। যাত্রীরা অন্যান্য বাহিনী থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আমরাও তাদের সহযোগিতা করতে পেরে আনন্দিত।
এদিকে হজ ক্যাম্পে মসজিদের টয়লেট ছাড়া যাত্রীদের জন্যে মাত্র তিনটি অতিরিক্ত টয়লেট রয়েছে। ফ্লাইট ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে সেসব টয়লেটে লাইন দেখা গেলেও কারও মধ্যে কোনো আক্ষেপ ছিল না।
কমপক্ষে পাঁচজন হজযাত্রীর কাছে তাদের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন না বলে জানান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আজ বুধবার রাত পৌনে ৯টায় জেদ্দার উদ্দেশে রওনা হবেন গোপালগঞ্জ থেকে অাসা নাসির মিয়া (৭১)। মঙ্গলবার রাতে তিনি ক্যাম্পে আসেন।
ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কিছুই খারাপ লাগেনি। তবে আমরা যারা বয়স্ক, তাদের অনেকসময় নাস্তা আর পানি আনার জন্য ছোটাছুটি করতে হয়। যদি এগুলো কেউ এনে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হত।
শেরপুরের শ্রীবরদী থেকে এসেছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, পুলিশ, স্কাউট আর আনসার সদস্যরা খুবই আন্তরিক। ভেতরে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আজকে দেখলাম, একটা ফ্লাইট কোনো ধরনের আগাম নোটিশ ছাড়া সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে। এই সময়টুকুতে সেই ফ্লাইটের যাত্রীরা অনেকটা দোটানায় ছিলেন। আমার একটাই অনুরোধ, হজ যাত্রীদের ফ্লাইট যেন সময়মতো ছাড়ে। ফ্লাইট বিলম্ব হলে যাতে আগে থেকে জানানো হয়। তাহলে যাত্রীদের আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
হজযাত্রী ও তাদের স্বজনদের জন্য ক্যাম্পে তিনটি ক্যান্টিন রয়েছে। ক্যান্টিনে রুটি, ভাত, ডাল, রুই মাছ, গরু-মুরগিসহ সব ধরনের খাবার পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্টিনগুলোতে নির্ধারিত মূল্যতালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে হজ ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ।
তবে অনেকস ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম আদায়ের প্রমাণ মিলেছে। জাগো নিউজের কাছে এক হজযাত্রীর স্বজন অভিযোগ করেছেন ক্যান্টিনগুলোতে ১০০ গ্রাম গরুর মাংস ৮০ টাকা উল্লেখ করা হলেও বিল আদায়ের সময় ১০০ টাকা ধরা হয়েছে। পরে ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করলে তিনি ৮০ টাকা নেন।
হজ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৭টি ফ্লাইটে মোট ২০ হাজার ৯৪৩ হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে একজন ইন্তেকাল করেছেন। আগামী ১৫ আগস্ট হজের শেষ ফ্লাইট বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে। ২৭ আগস্ট থেকে দেশে ফিরতে শুরু করবেন হাজিরা।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর মোট এক লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ৭৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার এক লাখ ২০ হাজার জন রয়েছেন।
এআর/আরএম/জেআইএম