অন্ধজনে আলো দিলেন ডা. শেহরিন
আলোর পথ ভুলে গেছেন শৈশবেই। দু’জনেই ঠিক একই সময়ে চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন। তিন বছর বয়সে সেই যে অন্ধকারে জীবনতরী ভাসালেন, আজও তার কিনার মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়েও চাকরি মেলাতে পারেননি দৃষ্টিহীন রফিক ও তার স্ত্রী মীম।
দ্বারে দ্বারে ঘুরে জীবন আকাশ যখন নিরাশার চাদরে আচ্ছন্ন, তখন শীর্ষ অনলাইন পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম অফিসে এসেছিলেন মানবিকতার পরশ পেতে। আর তাতে করেই খানিক আলোর দেখা মিলল এই দম্পতির।
দৃষ্টিহীন পরিবারের প্রতি ভালোবাসা আর মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিলেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শেহরিন এম. হক। রফিক-মীম সংসারের একমাত্র সন্তান সিয়ামের পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন তিনি। প্রতি মাসে সিয়ামের পড়ালেখাবাবদ ৫ হাজার টাকা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
আজ মঙ্গলবার জাগোনিউজ২৪.কম অফিসে রফিক-মীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নগদ টাকা দেন ডা. শেহরিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাগোনিউজ-এর সম্পাদক সুজন মাহমুদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জিয়াউল হক, সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশীদ, প্রধান প্রতিবেদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহবুবুর আলম সোহাগ।
‘অন্ধকার ভুবনে চাকরি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত তারা’ শিরোনামে গত ১৬ জুলাই একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় জাগো নিউজে। ওই প্রতিবেদনে জীবনকথা তুলে ধরেন দৃষ্টিহীন রফিক ও তার স্ত্রী মীম। তিন বছর বয়সে টাইফয়েড আক্রান্ত হয়ে দু’চোখের দৃষ্টি হারান নরসিংদীতে জন্ম নেয়া রফিক। একই বয়সে হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি হারান চাঁদপুরের মীম।
তবে দৃষ্টি হারালেও জীবনযুদ্ধে মনোবল হারাননি তারা। শত প্রতিকূলতা পায়ে মাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেন মীম। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন রফিক। বন্ধুদের মাধ্যমে পরিচয় হয়ে সংসার পাতেন তারা। জীবনের খেলাঘরে চারবছর আগে একটি ছেলেসন্তানও আসে সংসারে। ভরসা এখন ছেলে সিয়াম-ই।
দৃষ্টিহারা এই দম্পতির সংসারের পরিধি বাড়লেও রাষ্ট্র, সমাজ চোখ মেলে তাকায়নি। সরকারি, বেসরকারি নানা জায়গায় পরীক্ষা দিয়েও সফল হতে পারেননি তারা। এমনকি বেশ কয়েকটি লিখিত পরীক্ষায় পাস করেও চাকরির দেখা মেলেনি রফিক-মীমের। জীবনের বাতিঘরে আলোর নিশানা হয়ে ছেলে সিয়ামের জন্ম হলেও তাকে মানুষ করা নিয়েই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
অভিশপ্ত বেকার জীবনের ঘানি টেনে টেনে যখন ক্লান্ত, তখন ফের চাকরির আশায় গণমাধ্যমে ধরনা দেন তারা। তাদের দুঃখকথা তুলে জাগো নিউজে প্রকাশিত ওই সংবাদের জের ধরেই অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে চাকরি ও আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবও এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ড. শেহরিন অর্থ সাহায্য দিতে জাগো নিউজ’র অফিসে আসেন মঙ্গলবার।
ড. শেহরিন বলেন, মানুষ-ই তো মানুষের জন্য। ভালোবাসার কোনো সীমানা থাকে না। আর সবাই যদি এটি অনুধাবন করতে পারি, তাহলে সমাজে এত দুঃখ, বৈষম্য থাকতো না। আজ এই অসহায় পরিবারের পাশে সামান্য অর্থ দিয়ে দাঁড়াতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
সাহায্য পেয়ে দৃষ্টিহীন রফিক আর মীম যেন আত্মহারা। রফিক বলেন, আমার সন্তানকে উপলক্ষ করে যে সাহায্য আজ পেলাম, তার ঋণ কোনোভাবেই শোধ করতে পারবো না। আমার সিয়ামের চোখেই আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে চাই। আর এই আলো দেখাতে যারা পাশে থাকছেন, তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এএসএস/জেডএ/আরআইপি