দুঃখী মানুষের মুখে হাসি দেখে আমি অভিভূত : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে কিছু দুঃখী মানুষের মুখে হাসি দেখে আমি সত্যিই খুব অভিভূত। দেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করতে পেরেছি। দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাধীন সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেক্ট্রনিক উপায়ে বিতরণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো সংসার চালানোর দায়িত্ব আমরা নেবো না। তবে যে ভাতা দেবো, সে ভাতায় আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা হবে। বয়স্ক মানুষ যখন ভাতা পায় তখন ছেলে-মেয়েরাও তাকে গুরুত্ব দেয়। তার পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা দূর হয়। তাকে সংসারে বোঝা না ভেবে গুরুত্ব দেয়া হয়।
তিনি বলেন, আমরা এমন পরিমাণে ভাতা দেবো যা দিয়ে আপনি খাদ্য কিনতে পারবেন কিন্তু কাজ আপনাকে করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকলে কর্মবিমুখ হয়ে পড়বেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যারা যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেবো। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। প্রতিটি জায়গায় নামের তালিকা করে ডাটাবেজ করে রাখবো। ১ কোটি ৪০ লাখ মা এখন মোবাইল ফোনে টাকা পাচ্ছে। সে কারণে তাদের বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি- যার মাধ্যমে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা পাচ্ছি। ’৯৬-এ যখন সরকার গঠন করি তথন দেখি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম খাদ্য ঘাটতি দূর করতে হবে। তখন বিএনপি ছিল সংসদে বিরোধী দল। সংসদে তারা বলতো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে না। তাহলে বাইরে থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না অর্থাৎ ভিক্ষা পাওয়া যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানুষের কথা চিন্তা করি, সমাজের কথা চিন্তা করি। এজন্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করেছি। হিজড়া, বেদে সম্প্রদায় সমাজের অনগ্রসর যারা তাদের উন্নয়নে কাজ করি। তাদের জন্য ভাতা প্রবর্তন করেছি। ’৯৬-এ যখন এগুলো প্রবর্তন করি আমি সরকারে আসার পর প্রত্যেক এলাকায় কমিউনিটি করলাম। এর মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেই।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকার এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। কারণ এ থেকে সেবা পেলে জনগণ নাকি নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। এরপর ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসে পুনরায় সবকিছু চালু করি। সব ধরনের ভাতা কার্যকর করি। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনে আবার নির্বাচন। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে জনগণের ওপর। জনগণ নৌকায় ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসব, না দিলে আসব না। যদি আল্লাহ চান আর জনগণ ভোট দেয় তাহলে (ক্ষমতায়) আসব, নাহলে আসব না। কিন্তু তার আগে আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই- যেন আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি করতে না পারে, তাদের কাছ থেকে কেউ যেন আর টাকা কেড়ে নিতে না পারে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছিলাম, ২০০১-তে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বলে সেই কাজগুলোর অনেকগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত।’
এসময় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিশোরগঞ্জের বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত রুমা আক্তার বলেন, আপনি আমাকে যে সহযোগিতা করেছেন সেটা পেয়ে আমার খুব উপকার হয়েছে। এই টাকা আমি সংসারের কাজে লাগাই এবং ওষুধ খাই। আগে শহরে যাইতে হইতো, এখন যে আপনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টাকা দিচ্ছেন এতে আমাদের উপকার হবে। আপনাকে আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করি।
চাপাইনবাবগঞ্জের বিধবা ভাতাপ্রাপ্ত নূর জাহান বেগম বলেন, আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি। আমার স্বামী মারা গেছে, আমি কষ্টে ছিলাম। যেদিন থেকে বিধবা ভাতা পাচ্ছি সেদিন থেকে খুব ভালো আছি। আপনার জন্য দোয়া করি, আপনি ভালো থাকবেন।
এছাড়া নরসিংদীর একজন প্রতিবন্ধী ও একজন বিধবার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এইউএ/এমবিআর/জেআইএম