‘অস্তিত্বহীন নিবন্ধনের বিপরীতে রিপ্লেসমেন্ট চায় হজ এজেন্সি’
নিবন্ধিত সব হজযাত্রীর বিমানের টিকিট বিক্রি হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, অস্তিত্বহীন নিবন্ধনের বিপরীতে হজ এজেন্সি মালিকরা এখন হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) চাচ্ছেন।
সোমবার সচিবালয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীর বিমান টিকিট নিশ্চিতে পে-অর্ডার ইস্যু না করা ৫৬টি এজেন্সির সঙ্গে বৈঠকে সচিব এ তথ্য জানান। তবে বৈঠকে ৪৩টি এজেন্সির মালিক উপস্থিত ছিলেন।
ধর্ম সচিব বলেন, ‘প্রক্রিয়াগত কিছু কারণে অনেক হজ এজেন্সির টিকিট কাটা বাকি আছে। কারো টিকিট নিশ্চিত হওয়া এক ক্লিকের বিষয়। এটা হয়ে গেলে অনেকেই আজ ডাকা লাগত না।’
হজ এজেন্সিগুলোর উদ্দেশ্যে সচিব বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন এবার সৌদি আরব কোনো অতিরিক্ত স্লট দেবে না। আমরা দেখেছি প্রথম ও শেষের দিকে টিকিটের বেশি চাহিদা থাকে। মাঝখানের সময়ের টিকিটগুলো নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। কেউ বাড়ি ভাড়া না হওয়ায় টিকিট নেন না। আমরা বলি আগে টিকিট নেন, তারপর বাড়ি ভাড়া করেন। এখনও বাড়ি অ্যাভেইঅ্যাবেল।’
‘মাথায় রাখতে হতে ১০ হাজার হজযাত্রী টিকিট না নিলে মাথায় রাখতে হবে ১০ হাজার হজে যেতে পারছেন না। আমরা অতিরিক্ত স্লট পাব না, এই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের এগোতে হবে।’
এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে সভায় টিকিট না কাটা হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দাবি করা হয়। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী মোয়াল্লেম ফি, বাড়ি ভাড়া করতে হয়। এগুলোসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় ইতোমধ্যে সৌদি সরকারকে পরিশোধ করা হয়েছে। অনেক এজেন্সি বলেছে, (রিপ্লেসমেন্ট) যদি দেন যাবে, না দিলে যাবে না। কেউ বলেনি দিতে হবে। এখন থেকেও তো বুঝা যায় ওইগুলো ড্রপ (হজে যাবেন না) করবে। ড্রপ করলে দেখা যাবে ৭-১০ হাজার যাবেন না। আশা করি, যৌক্তিক বিষয় নির্ধারণ করে এজেন্সিগুলোকে রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া উচিত।’
এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘হজ নীতিমালা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো ইতোমধ্যে মোট হজযাত্রীর ৪ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট করে ফেলেছেন। কেউ মারা গেলে বা গুরুতর অসুস্থ হলে কেবলমাত্র রিপ্লেসমেন্ট করা হয়। আপাতত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেই। পরে অবস্থা বুঝে এ বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তবে এ বিষয়ে কিছু করতে (হজ নীতিমালা পরিবর্তন করে ফের রিপ্লেসের সুযোগ দেয়া) হলে সর্বোচ্চ পর্যায়ের (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। আমি ও আমার মন্ত্রী এই কাজ করতে পারব না।’
রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে এজেন্সিগুলোর কিছু চালাকি রয়েছে জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ওনারাও জানেন কী পরিস্থিতিতে কোন নম্বরগুলো দিয়েছেন, সেখানেই কিন্তু রিপ্লেসমেন্ট করতে চাচ্ছে। যে পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের অস্থিত্ব নেই, সেই অস্তিত্ববিহীন রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সেই রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে এখন রিপ্লেসমেন্ট চাচ্ছেন। এর দায় কে নেবে?’
এ সময় এজেন্সি মালিকরা হইচই করে উঠেন। সচিব বলেন, ‘অবশ্যই আছে এটা। এটা যারা করেছে আমরা তাদের শনাক্ত করছি, শাস্তি দিচ্ছি। শাস্তি আরও দেয়া হবে।’
সচিব বলেন, ‘আমি এখনও মনে করি সব টিকিট বিক্রি হবে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা নেব, আমি এখনওই কিছু বলছি না।’
এই ৫৬ এজেন্সির কতজনের টিকিট কাটা হয়নি জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমি ওনাদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়েছি। এখনও যোগ করিনি। প্রত্যেকের আলাদা তথ্য নিয়েছি, কে কতজনের টিকিট নিয়েছেন, নেননি, পাঠিয়েছেন- যোগ করলে সব পাওয়া যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মতো মনে হয় ৮/৯ হাজারও থাকবে না। ওনারাও (এজেন্সি মালিক) এটা জানেন, আমাদের একটা আঁচ-অনুমান আছে, সেটা আমরা এখন বলব না। সেটা সময় মতো বলব।’
‘এটাকে আমি সমস্যা মনে করছি না। আপনারা মনে করছেন ৯ হাজার টিকিট অবিক্রিত, আমি তো মনে করি আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ৪-৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যাবে।’
৫২ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ভিসা কোন সমস্যা নয়। প্রতিদিন যা পাঠাচ্ছি তাই হয়ে যাচ্ছে। খুব দ্রুত ভিসা হচ্ছে।’
আগামীকাল ৮৮ এজেন্সিকে ডাকা হয়েছে। তবে এই এজেন্সিগুলোর হজযাত্রী খুব বেশি নয় বলেও জানান আনিছুর রহমান।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২১ আগস্ট (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন হজে যাবেন। চলতি বছর হজে যাওয়ার ফ্লাইট গত ১৪ জুলাই শুরু হয়েছে।
আরএমএম/জেএইচ/আরআইপি