ঢাবি ছাত্রদল : পদ প্রত্যাশীদের দৌঁড়ে অছাত্র ও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা


প্রকাশিত: ০২:৫৮ এএম, ০৬ আগস্ট ২০১৫

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের নতুন কমিটি। আগস্ট এর শেষের দিকে কিংবা সেপ্টেম্বরের শুরুতেই হতে পারে নতুন কমিটি এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের বেশ কয়েকজন নেতা। তবে এবারও পদ প্রত্যাশীদের দৌঁড়ে এগিয়ে অছাত্র, ইয়াবা ব্যবসায়ী, ছিনতাইয়ের অভিযোগে কারাভোগকারী ও বিবাহিতরা। ফলে বাদ পড়ছেন ত্যাগী ও পরিশ্রমীরা। যা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন পদ প্রত্যাশী বেশ কয়েকজন নেতা।

তারা জানান, আমরা চাই জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী, পরিশ্রমী ও যোগ্যদের মাধ্যমে কমিটি হোক। তাহলে দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে। অন্যথায় আবারও এই ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সহাবস্থান অনিশ্চয়তায় পড়বে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যদি ফুল প্লেস কমিটি হয় তাহলে জুনিয়ররাই আসবে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে। আর যদি আহ্বায়ক কমিটি হয়, তাহলে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে কমিটি করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, যদি ফুল প্লেস কমিটি হয় তাহলে নেতৃত্ব পাওয়ার তালিকায় এগিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় অনুষদ শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আল মেহেদী তালুকদার ও কবি জসিম উদ্দিন হলের সদস্য আবুল বাশার সিদ্দিকী।

অন্যদিকে এদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের আভাস পেয়ে ইতিমধ্যে হতাশা কাজ করছে ত্যাগী ও পরিশ্রমী পদ প্রত্যাশীদের মাঝে।  নিজেদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাদের মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যদি যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নেতৃত্বে দেয়া হয়, তাহলে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হবে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এমনকি আরো ভঙ্গুর হতে পারে এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম। তাদের যুক্তি এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে পার্টি বিরোধী দলে আছে। এর মধ্যে যদি অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি হয়, তাহলে দল চিরতরে বিলিন হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত দুই ব্যক্তির মধ্যে আল মেহেদী তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ২০০২-০৩ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তার কোন ছাত্রত্ব নেই। ড্রফ আউটের কারণে স্নাতক শেষ করলেও শেষ করতে পারেননি স্নাতকোত্তর।

আবার ২০০৬ সালে রাজধানীর পুরান ঢাকায় একটি বিয়ে করেন তিনি। এ বিয়ের দুই বছর পর প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে ২০০৬ সালে ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার ভর্তি ফরম চুরি করার। পরবর্তীতে হল শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক করিম সরকার তার থেকে ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে কিছু দিনের জন্যে তাকে হল থেকে বেরও করে দেন।

এ বিষয়ে করিম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে বলতে চাই না। অনেক আগের ঘটনা। ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে তবে এখন মাঠে যারা সক্রিয়, তারাই নেতৃত্বে আসবে।’

এছাড়াও চাঁনখারপুলে এক ব্যবসায়ীর গাড়ি চুরি করে পুলিশের হাতে আটকও হন তিনি। পরবর্তীতে তৎকালীন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল মেহেদী তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে আবুল বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০০৩-০৪ সেশনের ছাত্র। বর্তমানে তার কোন ছাত্রত্ব নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ইয়াবা ব্যবসা করার। সূত্র জানায়, ২০১১ সালের মার্চ মাসের ১৪ তারিখ ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে শাহবাগের হোটেল ইয়ামেনী ইন্টারন্যাশনালে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন। পরে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে এস আই অহিদুর রহমান মজুমদার বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৯ (১)। যার ভিত্তিতে তিনি ছয় মাস কারাভোগও করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, ‘কমিটি হওয়া নিয়ে যেটি আলোচনা হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ম্যাডামসহ ঊর্ধ্বতনরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

অন্য আরেক নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় কর্মীদের মাঝে একটু হতাশা কাজ করছে। আন্দোলন চাঙ্গা করতে হলে কমিটির বিকল্প নেই। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই যোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি দেওয়া উচিত। আর ঊর্ধ্বতন নেতাকর্মীরা যেহেতু আছেন তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের সূতিকাগার সেহেতু এ জাতীয় কমিটি গঠনের আগে ঊর্ধ্বতনরা চিন্তা করে যোগ্যদের দিয়েই কমিটি দিবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদপ্রত্যাশী এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলের এমন দুর্বিষহ মুহূর্তে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের নিয়ে কমিটি করা হলে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের অবস্থান আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। আর আমরা যারা রাজপথে সব সময় সক্রিয় ছিলাম তাদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মী সব কিছু থেকে বঞ্চিত হবো।’

তিনি বলেন, আমি মনে করি যদি আহ্বায়ক কমিটি করা হয় তাহলে সবাই আগামী দিনে রাজপথে সক্রিয় থাকবে। আর যদি ফুল প্লেস কমিটি হয় তাহলে অবশ্যই যোগ্যতা সম্পন্ন, জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী এবং রাজপথে সক্রিয় থাকে এমন লোকই নেতা হোক।

এ ছাড়া বেশীর ভাগ নেতাকর্মীর দাবি এখানে যেন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। তাহলে কেউ বঞ্চিত হবে না। সবাই রাজপথে সক্রিয় থাকবে।

কমিটি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, শিগগিরই কমিটি দেয়া হবে। এর আগে আমরা কমিটি দিতে বারবার চেষ্ট করলেও সরকারের একঘেয়েমী মনোভাবের কারণে দিতে পারিনি। কিন্তু এবার দেয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী। সেক্ষেত্রে এই মাসের মধ্যেই দেয়া হতে পারে। আর মেহেদী-বাশার সহ কে আসছেন এমন গুঞ্জন সব সময়ই শোনা যায় এবারও তাই। তবে যারা রাজপথে সবসময় সক্রিয় ছিল তারাই এই কমিটিতে আসবে।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। আমরা এর আগেও বারবার চেষ্টা করেও আমাদের সভাপতি গ্রেফতার হওয়াসহ নানান কারণে দিতে পারিনি। তবে এবার আমাদের চেষ্টা খুবই বেশী। আমরা চাই কিছু দিনের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে।

তিনি বলেন, দুটি ফরম্যাটে কমিটি হতে পারে একটি হচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি অন্যটি হচ্ছে ফুল প্লেস কমিটি। যদি সিনিয়রদের নিয়ে কমিটি করা হয় তাহলে আহ্বায়ক কমিটি হবে। আর যদি জুনিয়রদের নিয়ে কমিটি করা হয় তাহলে ফুল প্লেস কমিটি করার সম্ভাবনা খুবই বেশী। সেক্ষেত্রে মেহেদী-বাশার ছাড়া অন্য কেউও আসতে পারে। তবে জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী এবং রাজপথে যারা সক্রিয় ছিল তারাই সর্বশেষ কমিটিতে থাকবে। সেক্ষেত্রে এরা আসতেও পারে আবার বাদও পড়তে পারে।

এমএইচ/এআরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।