শিশু রবিউল হত্যা : শোকে মুহ্যমান আমখোলা গ্রাম
বরগুনার তালতলী উপজেলায় নির্মম নির্যাতনে খুন হওয়া শিশু রবিউলের মৃতদেহ বুধবার বিকেলে বাদ আছর জানাযা শেষে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের পর আমখোলা গ্রামে রবিউলের মরদেহ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো আমখোলা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। শতশত গ্রামবাসী সেখানে ভিড় করেন শেষবারের মতো শিশু রবিউলের মরদেহ দেখতে।
বুধবার বিকেলে তালতলীর ছোট আমখোলা গ্রামে রবিউলদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, বারবার রবিউলের নাম বলে মুর্ছা যাচ্ছেন রবিউলেরর মা এবং বাবা দু’জনেই। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে।
উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রবিউল আউয়াল। স্থানীয় ফরাজী বাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেনিতে পড়তো সে। আমখোলা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দুলাল মৃধা আর মোর্শেদা বেগমের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে একমাত্র ছেলে রবিউল। সোমবার রাতে মাছ চুরির অভিযোগ এনে নির্মম নির্যাতনের পর তাকে হত্যা করে বাড়ির পাশের একটি জলাশয়ে মরদেহ ফেলে রাখে পাষণ্ডরা। শাবল দিয়ে চোখে ও মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রবিউলের স্বজনদের।
শিশু রবিউলের পিতা দুলাল মৃধা জানান, তাদের বাড়ির পাশের লুতরার খালে জাল পেতে মাছ ধরতো প্রতিবেশী মিরাজ (২৫)। দু’তিন দিন আগে একবার মিরাজ তাদের হুমকি দেয় যে, তার জালের মাছ কে বা কারা ধরে নিয়ে যায়। তাদের ছেলে রবিউল আউয়ালকে সে সন্দেহ করছে বলে জানায়। এরপরে যদি সে রবিউল আউয়ালকে পায় তবে তাকে দেখিয়ে দেবে বলেও হুমকি দিয়ে যায় মিরাজ। এরপর সোমবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয় রবিউল। সারারাত ধরে অনেক খোঁজাখুজির পরেও রবিউলের কোনো হদিস পাননি তার স্বজনরা।
পরে মঙ্গলবার বিকেলে সোহাগ নামের স্থানীয় অপর এক কিশোর রবিউলদের বাড়ির অদূরেই আমখোলা গ্রামের লুতরার খালে রবিউল আউয়ালের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে তার স্বজনদের খবর দেয়। খবর পেয়ে রবিউল আউয়ালের পিতা দুলাল মৃধার উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
দুলাল মৃধা জানান, রবিউলের মরদেহ তিনি দেখেছেন, তার ডান চোখ উৎপাটন করে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। শিশু রবিউলের মরদেহের সুরতহাল করেছেন তালতলী থানার এসআই আলমগীর হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবুল আক্তার জানান, সুরতহালের সময় রবিউলের বাম চোখ, কপালের বাম পাশ এবং থুতনীতে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, এ ঘটনায় শিশু রবিউলের পিতা বাদী হয়ে তালতলী থানায় অভিযুক্ত মিরাজকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। রবিউলের মৃত্যুর খবর পেয়েই প্রধান সন্দেহভাজন মিরাজকে বুধবার সকালেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তালতলী থানার পুলিশ। তিনি আরো বলেন, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনেও পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
## এবার নির্মম নির্যাতনে প্রাণ গেল বরগুনার রবিউলের
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/বিএ