সংকট শুনলেন বুঝলেন সময় নিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
‘ক্যারি অন’ শিক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে শুনলেন, বুঝলেন এবং আরো ভাল করে বোঝার জন্য দু’দিন সময় নিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের নতুন কোর্স কারিকুলামে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র্র করে সৃষ্ট সংকট নিরসনের গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে তিনি বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ও চার বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী) চিকিৎসা অনুষদের ডিনদের ডেকে বৈঠকে বসেছিলেন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের শুরুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিএমডিসি সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু শফি আহমেদ আমিন, বিএমডিসির সহ-সভাপতি ও বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানসহ অন্যান্য ডিনরা মন্ত্রীকে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি কী, বিগত বছরগুলোতে এমবিবিএস কোর্স কোন কারিকুলামে কিভাবে পরিচালিত হয়েছে, কেন নতুন কারিকুলামে ক্যারি অন পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করেন।
সকলের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথাবার্তা বলার জন্য তিনি আগামী শনিবার দুপুর পর্যন্ত সভা মূলতবি করেন।
উপস্থিত সিনিয়র অধ্যাপকরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানান, পুরোনো কারিকুলামে দেড় বছর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াশুনা শেষে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। পরীক্ষায় পাস করে তৃতীয় বর্ষে উঠে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে মোট ৫টি বিষয় ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতো।
পুরোনো কারিকুলামে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় কেউ ফেল করলেও সে তৃতীয় বর্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস ও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতো। পরবর্তীতে যে বিষয়ে ফেল করেছে সে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতো। এ পদ্ধতিটিই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু নতুন কারিকুলামে ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সে সুযোগ রাখা হয়নি। যারা ফেল করবে তারা সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবেনা। ক্লাস চালিয়ে গেলেও সেটি তার শিক্ষাকাল হিসেবে গণ্য হবেনা।
২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে সালে যারা ভর্তি হয়েছিল ১৮ মাস পড়াশুনার পর সম্প্রতি প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষায় শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। যারা ফেল করেছে নতুন কারিকুলাম অনুসারে তারা ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবেননা। তাই তারা পুরোনো ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনঃবহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষ ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক জাগো নিউজকে জানান, বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকদের কেউ ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনঃবহালের পক্ষে কথা বলেননি। তারা বলেছেন, ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। বিভিন্ন বিষয়ের ২৫০ জন শিক্ষক অনেক চিন্তাভাবনা করে এটি তৈরি করেছেন। ১৮ মাস আগে যখন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় তখন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবককে ডেকে নতুন কোর্স কারিকুলাম সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। তবুও তারা আন্দোলনে নেমেছে।
এ সময় মন্ত্রী তাদের মতামতের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গত ছয় বছর বড় ধরনের কোন ঝামেলা ছাড়াই মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এখন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থেকে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
এ সময় শিক্ষকরা বলেন, ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি নামে কোন ছাড় দেয়া যাবেনা। শিক্ষার্থীদের যদি সুযোগ দিতেই হয় তবে অন্য কোন নামে (কম্পার্টমেন্টাল, সাপ্লিমেন্টারি) পরবর্তীতে পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ রেখে পদোন্নতি দিতে হবে।
এ বিষয়ে বিএমডিসির সভাপতি ও সহ-সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা কোন মন্তব্য করবেননা।
# ‘ক্যারি অন’ আন্দোলনের সমাধান চায় সরকার
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি