বদলগাছির এলজিএসপি প্রকল্পের কোটি টাকা ইউপি চেয়ারম্যানদের পকেটে
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে এলজিএসপি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা না করেই পকেট ভরিয়েছেন চেয়ারম্যানরা।
এদিকে, বিষয়টির বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখায় চেয়ারম্যানদের রোষানলে পড়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহমেদ রুমি চৌধুরী। ইউপি চেয়ারম্যানরা একযোগে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উপজেলার আট ইউপির মধ্যে সদরে ১৯ প্রকল্পের বিপরীতে ১৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা, মথুরাপুরে ১৭ প্রকল্পের বিপরীতে ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭১৭ টাকা, পাহাড়পুরে ১৬ প্রকল্পের বিপরীতে ১৬ লাখ ৬ হাজার টাকা, মিঠাপুরে ২১ প্রকল্পের বিপরীতে ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ২৭৫ টাকা, কোলায় ১৪ প্রকল্পের বিপরীতে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ২০৪ টাকা, বিলাশবাড়ীতে ১৫ প্রকল্পের বিপরীতে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৬শ টাকা, আধাইপুরে ১৮ প্রকল্পের বিপরীতে ১৬ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং বালুভরায় ১১ প্রকল্পের বিপরীতে ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০ জুনের মধ্যে কাজগুলো সমাপ্ত করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ঠ চেয়ারম্যানরা কোন কাজই করেন নি। উপরন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রকল্পের চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে তা উত্তোলন করে।
পরে গত ২৬ জুলাই প্রকল্প পরিদর্শনে বালুভরা ইউপিতে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহমেদ রুমী চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: হুসাইন শওকত এবং উপজেলা প্রকৗশলী মো: মনিরুজ্জামান। কাজগুলোর মধ্যে ১০টি প্রকল্পের কোথাও ১ ইঞ্চি কাজও হয়নি। এছাড়া ১১নং প্রকল্পে আরচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ টাকার আসবাবপত্র সরবরাহের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন জানান, বিগত অর্থবছরে একটি টাকার জিনিসও তারা পাননি।
পরে ২৮ জুলাই বিলাশবাড়ী ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গেলে সেখানে চারটি প্রকল্পের আংশিক কাজ দেখতে পান। এছাড়া অবশিষ্ট ১১টি প্রকল্পের কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাননি পরিদর্শকরা।
এ ব্যাপারে বিলাশবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন খান রতন আত্মসাতের বিষয়টি প্রত্যাক্ষান করে জানান, প্রথম কিস্তির পাঁচটা কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তির কাজ এখনও শুরু হয়নি। দ্বিতীয় কিস্তির কাজ আগষ্ট সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় আছে।
বালুভারা ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন জানান, প্রথম কিস্তির কাজ শেষের পথে। দ্বিতীয় কিস্তির কাজ এখনও পাশ হয়নি।
মথুরাপুর ইউপি আব্দুল হাদী চৌধুরী টিপু জানান, ১৭ প্রকল্পের মধ্যে একটি গ্রেটের কাজ বাঁকি আছে। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্পের ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা অলি আহমেদ রুমী চৌধুরীর জানান, প্রকল্পের কোন কাজ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা টাকা আত্মসাত করেছেন। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ২৯ জুলাই উপজেলা পরিষদের মাসিক সম্বন্বয় সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কোন চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুসাইন শওকত জানান, সব ইউপির কাজ পরিদর্শন করে চেয়ারম্যানদের নোটিশ করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো: মনিরুজ্জামান ঢাকায় একটা ট্রেনিংয়ে অবস্থানরত জানিয়ে বলেন, তদারকি এবং বিল উত্তোলনের জন্য এলাকা ভিত্তিক কমিটি ভাগ করে দেওয়া আছে। কোনটার কি অবস্থা তাদের সঙ্গে আলাপ ছাড়া তিনি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
এএইচ/এমএস