রোহিঙ্গাদের আগমন টেকসই উন্নয়নের অন্যতম ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৪ পিএম, ০৪ জুলাই ২০১৮

* এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন সমন্বিত সহযোগিতা
* তিনদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু

রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অন্যতম ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়নে কাঠামোগত প্রস্তুতির বাইরেও যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। নতুবা বৃহৎ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এসডিজির বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক তিনদিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিনে বিভিন্ন সেশনে এসব কথা জানান বক্তারা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার এ জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের আয়োজন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং প্রধননমন্ত্রীর কার্যালয়ের গর্ভানেন্স ইনভেশন ইউনিট (জিআইইউ)। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এ এ মান্নান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এসডিজি বাস্তবায়নে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার, মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও, বেসরকারি উদ্যোক্তসহ সব নাগরিককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। অন্যদিকে এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চারটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সেগুলোও সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

পরবর্তীতে দিনব্যাপী তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হচ্ছে, এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রণালয় ও এ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর ভূমিকা, পরিসংখ্যান, আইএমইডি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান এবং ভূমিকা সম্পর্কে তুলে ধরা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, শুধু গতানুগতিক কাজ দিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এজন্য কাজের বাইরেও সৃজনশীল কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এমডিজিকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন এসডিজিকে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যা বলা হয়েছে সেগুলো এসডিজির সঙ্গেই যুক্ত। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে এটি অন্যতম একটি অর্জন।

একটি সেশনে অংশ নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এসডিজির জন্য একটি বড় ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়নে জন্য হুমকি। তাই পানি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিয়ে সরকার ডেল্টা প্লান তৈরি করেছে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করার মধ্যদিয়ে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

অন্য একটি অধিবেশনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় বাড়ানো, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য আমাদের ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে আমার অনুমান। এই সময়ের মধ্যে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ২৭ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। জিডিপিতে বিনিয়োগের পরিমাণ হতে হবে ৪০ শতাংশ এবং বৈষম্য পরিমাপের সূচক গিনি সহগ বর্তমানের দশমিক ৪৮ থেকে দশমিক ৩৩ এ কমিয়ে আনতে হবে। এটি অর্জন করতে হলে আমাদের অর্থনীতির বিশেষ করে উৎপাদন এবং রফতানিতে বৈচিত্রকরণ করতে হবে। শিল্পায়নকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির মূল হাতিয়ার করার পরার্মশ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। এজন্য সরকারি, বেসরকারি, এনজিও, দাতা সংস্থা এমনকি পুরো সমাজকে এক প্লাটফর্মে আনতে হবে। এরকম সম্মেলন সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু হলেও এখন কাঠামোগতভাবে এসডিজির অ্যাকশন প্লান অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।

নজিবুর রহমান বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নকালীন যে কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। যেমন; রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এটিকে এসডিজির সঙ্গে যুক্ত করে দেখতে হবে। এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর সৃজনশীল চিন্তার ফসল।

আইএমএফ এর প্রতিনিধি রাঙ্গা গুট সেলফ বলেন, এসডিজি বাস্তায়নে আর্থিক খাতে চারটি ক্ষেত্রে সংস্কারের সুযোগ রয়েছে বলে আইএমএফ মনে করে। এগুলো হলো, আর্থিক খাতে সংস্কার, উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

ড. শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (বুধবার) তার অফিসে এসডিজির ন্যাশনাল অ্যাকশনন প্লানের মোড়ক উম্মোচন করেছেন। আমরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এসডিজি বাস্তবায়নের ম্যাপিং করেছি। আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্লান করেছি এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়ার প্লান তৈরি করছি। সবকিছুই এসডিজিকে ঘিরেই করা হচ্ছে।

এমএ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।