অবশেষে মা ও মেয়ের মধুর মিলন


প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০১৫

অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মাগুরার সেই বুলেটবিদ্ধ নবজাতক সন্তান ও তার মা নাজমা বেগমের মধুর মিলন ঘটেছে। সুদীর্ঘ ২৬৪ ঘণ্টা (১১ দিন) অপেক্ষার পর সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) প্রথমবারের মতো মা ও মেয়ের দেখা হয়। এ সময় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।

সকাল সোয়া ১০টা। এনআইসিইউ ওয়ার্ডের পাশেই গাইনি অ্যান্ড অবস ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন নাজমা বেগম ধীর পায়ে হেটে এনআইসি ইউনিটে প্রবেশ করেন। সবার দৃষ্টি তখন নাজমা বেগমের দিকে। একজন নার্স এগিয়ে এসে তাকে হাতে ধরে মেয়ের বেডের পাশে নিয়ে যান। নাজমা বেগম বেডের পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টিতে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

হাসিমুখে ক্ষীণ স্বরে বলতে থাকেন, ‘গুলি খেয়েও মা আমার মা বাইচ্যা থাকবো তা আশা করি নাই। আল্লাহ তারে নতুন জীবন দান দিছে।’ এ সময় নাজমা বেগম আরো বলেন, মাগুরা হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর যখন জানলাম বেঁচে আছে তখন থেকেই তাকে এক নজর দেখতে মনটা ছটফট করছিল। দেখা করলে মেয়ের ক্ষতি হতে পারে শুনে আর দেখা করতে আসিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলী এভাবেই মা ও মেয়ের প্রথমবারের মতো দেখা হওয়ার দৃশ্যের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি জানান, নবজাতক শিশুর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। কয়েকদিন আগে তার রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা (জন্ডিস) ১৭তে উঠেছিল। ফটোথেরাপি (বিশেষ ধরনের আলোর তাপ দেয়ার মাধ্যমে রক্তে বিলুরুবিনকে ভেঙে দেয়া হয়) চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে বিলুরুবিনের মাত্রা ১২তে নেমে এসেছে। কাল থেকে হয়তো তাকে আর ফটোথেরাপি দিতে হবে না।

রোববার শিশুটিকে আগের দিনের চেয়ে বেশি পরিমাণ মায়ের বুকের দুধ খেতে দেয়া হয়। তাকে প্রতি তিন ঘণ্টা পর পর ৭ মিলিগ্রাম খেতে দেয়া হয়েছিল। আজ পরিমাণ ও সময় বাড়িয়ে দুই ঘণ্টা পর ১০ মিলিগ্রাম করে খেতে দেয়া হয়। ডা. শিউলি জানান, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও শিশুটি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। যেকোনো সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হতেও পারে। মেডিকেল বোর্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিত সর্বশেষ অবস্থা জেনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, প্লাস্টিক সার্জন ও অর্থোপেডিক সার্জনরা বোর্ডে থাকলেও এখন আর তাদের প্রয়োজন হচ্ছে না। শিশুটির গুলিবিদ্ধ হাতে প্লাস্টিক সার্জারি লাগবে কি-না তা জানতে প্লাস্টিক সার্জনকে বোর্ডে রাখা হয়। কিন্তু হাতের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। শিশুটির বুকের এক্সরে করে দেখা গেছে লিভারে কোনো ধরনের সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই মাগুরায় স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় শিশুটি। গুলিবিদ্ধ মাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতক শিশু ভুমিষ্ঠ হয়। তখন মায়ের জ্ঞান ছিল না। উন্নত চিকিৎসার জন্য নবজাতককে ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। বুকে পিঠে, হাতে, গলায় ও চোখে ক্ষত হয়।

সম্প্রতি অস্ত্রোপচারে তার শরীরে ২১টি সেলাই পড়ে। ইনফেকশনমুক্ত রাখতে তাকে এনআইসিইউতে নিয়ে আসা হয়। মেয়েকে দেখতে এবং বুকের দুধ খাওয়াতে মাগুরা হাসপাতাল থেকে ঢামেক হাসপাতালে আসলেও তাদের দেখা হয়নি। মা নিজেও গুলিবিদ্ধ থাকায় দু`জনেরই ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কায় দেখা করতে দেয়া হয়নি। সোমবার সকালে মা ও মেয়ের মিলনের মাধ্যমে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়।

এমইউ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।