এমপিপুত্র শাবাবকে ‘শনাক্তে’ পুলিশের হাতে সিসিটিভি ফুটেজ

আদনান রহমান
আদনান রহমান আদনান রহমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩০ পিএম, ২১ জুন ২০১৮

> গুঞ্জন, রাতেই দেশত্যাগ করবে শাবাব

> শাবাব নয়, গাড়ি চালিয়েছে ড্রাইভার

> যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তকে গ্রেফতার

রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় সেলিম ব্যাপারী (৪৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় সর্বশেষ তথ্য প্রমাণে এমপিপুত্র শাবাব’কে অভিযুক্ত ‘বলতে পারছে না’ পুলিশ। গাড়িটির চালকের আসনে তিনিই ছিলেন কী-না এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মহাখালী এলাকার কয়েকটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তকে গ্রেফতারে অভিযানে নামবে পুলিশ।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মহাখালীর ফ্লাইওভারের এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর গাড়িটি দ্রুত সংসদ ভবনের উল্টো দিকের ন্যাম ফ্ল্যাটে ঢুকে যায়। গাড়িটিকে অনুসরণ করেন একজন মোটরসাইকেল ও আরেকজন প্রাইভেটকার আরোহী। পরে ন্যাম ফ্ল্যাট ও এর আশপাশের সিকিউরিটি গার্ডরা জানান গাড়িটি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরীর। এটি তার স্ত্রী ও নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার শিউলির নামে রেজিস্ট্রেশন করা।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতেই কাফরুল থানায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে একটি মামলা করে। মামলা নম্বর-১৮। মামলায় আসামিকে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে একাধিক সাক্ষ্য থাকলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ‘অভাবে’ একরামুলের ছেলে শাবাব চৌধুরীকে গ্রেফতার কিংবা হেফাজতে নেয়নি পুলিশ।

কাগজে কলমে কাফরুল থানায় দায়ের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন কর্মকার হলেও পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) পর্যায়ের কর্মকর্তারা এর তদন্ত করছেন।

পুলিশের মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) সৈয়দ মামুন মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো বাসাবাড়ি নেই। কয়েকটি বাণিজ্যিকভবনের বাইরে থাকা ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, আরও ফুটেজ নেয়া হচ্ছে। সেগুলো দেখে যাচাই-বাছাই করে চালককে শনাক্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গাড়ি জব্দের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গাড়িটি ইতোমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে। এটি ন্যাম ভবনেই রয়েছে, জব্দ করা হয়নি। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য গাড়িটি কে ড্রাইভ করছিল সেটা খুঁজে বের করা।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার যেসব ফুটেজ পাওয়া যাবে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হবে। এছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। মূলত ঘটনার সময় গাড়ি কে চালাচ্ছিল সে সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালাবো।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত গাড়িটি জব্দ করতে পারিনি। তবে পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

এদিকে এমপিপুত্রের গাড়িচাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ভাইরাল হওয়ার পরপর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন ফেসবুকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শাবাব নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। সে আজ বৃহস্পতিবার রাতেই দেশত্যাগ করবে বলে ফেসবুকে গুঞ্জন উঠেছে।

তদন্তে সময় লাগার কারণে আসামি দেশত্যাগ করতে পারে কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, অপরাধের সঙ্গে কোন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকলে সেক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণ অথবা সাক্ষ্য প্রমাণ থাকতে হয়। প্রথমেই আমাদের গাড়িটির মালিক খুঁজে বের করতে হবে। দ্বিতীয়ত গাড়িটি কে চালাচ্ছিলেন তা বের করতে হবে। এরপরই আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা শাবাবকে অভিযুক্ত বললেও তাকে নির্দোষ দাবি করছেন তার মা কামরুন্নাহার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গাড়ি চালানোর জন্য আমাদের ড্রাইভার আছে। ড্রাইভার গাড়ি চালিয়েছে। শাবাব গাড়ি চালায়নি।

এদিকে দুর্ঘটনার পর একজন মোটরসাইকেল আরোহী গাড়িটি তাড়া করে তার বাড়ি পর্যন্ত যায়। সিকিউরিটি গার্ড সূত্রে জানতে পারেন এটি এমপিপুত্র শাবাব। শাবাব গাড়ি থেকে নামার পর সে শাবাবকে দুর্ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। সে সময় শাবাব তাকে জানায়, ‘আমার গাড়ি সঙ্গে একটি বাসের ধাক্কা লেগেছিল কিন্তু কেউ মারা গেছে কী-না তা জানি না।’ এর পরপরই ওই মোটরসাইকেল আরোহী ‘৯৯৯’ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। কিন্তু গতকাল বুধবার দুপুর থেকে তার ফেসবুক এবং মোবাইলে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। ওইদিন রাত থেকে তার ফেসবুক ডিঅ্যাক্টিভেটেড এবং মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

ময়নাতদন্ত শেষে সেলিম ব্যাপারীকে উত্তরখানের পুটলা টোলাবাগ এলাকায় দাফন করা হয়েছে বলে জানান তার জামাতা আরিফ ভূইয়া। তবে বৃহস্পতিবার থেকে তার এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এআর/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।