ঈদের জন্য প্রস্তুত শিশু পার্ক

মুহাম্মদ ফজলুল হক
মুহাম্মদ ফজলুল হক মুহাম্মদ ফজলুল হক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ১৫ জুন ২০১৮

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগস্থ শিশু পার্কের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা (আট) পর্যন্ত শিশুদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে ৪০ বছর বয়স্ক এই পার্কটি।

প্রতি বছরের মতো এবারও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মতো নিরাপত্তার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে পার্কটিতে। এ জন্য এবার ৪০টি সিসি টিভি ক্যামরা লাগানো হয়েছে। পুরো পার্ক না হলেও ভিতর ও বাইরের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকজুড়েই এই সিসি ক্যামেরার চোখ রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণ করছেন পার্কের মধ্যে অবস্থিত ঘর থেকে।

জানা গেছে, দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঈদের পরের ৬ দিনের প্রতিদিনই চালু থাকবে এই বিনোদন কেন্দ্রটি।

শিশু পার্কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। শিশুদের আনন্দের জন্য রাইডগুলোতে নতুন রঙ করা না হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সব ধরনের মেরামত কাজ শেষ করে নতুনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। পার্কের ভেতরে ঢোকা এবং রাইডগুলোর জন্য আলাদা আলাদা টিকিটের মূল্য বাড়ানো হয়নি। সব কিছু আগের নির্ধারিত দামে থাকবে।

শাহবাগ শিশুপার্কে বিনোদনের জন্য ট্রেন, উড়োজাহাজ, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযান, রোমাঞ্চ চক্র, আনন্দ ঘূর্ণি, বিষ্ময় চক্র, এসো গাড়ি চড়ি, চাকা পায়ে চলা, লম্ব ঝম্ব, ঝুলন্ত চেয়ার, ফুলদানি আমেজ ও এফ-৬ (জঙ্গি বিমান) ফেরিস হুইল স্কেটিং রিং, মেরি গো রাউন্ডসহ মোট ১২টি রাইড আছে। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবার মোট ১০টি রাইড প্রস্তুত রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় রাইডগুলো ফাঁকা থাকলেও ঈদের সময় শিশুদের কলকাকলিতে পুরো শিশু পার্ক হয়ে উঠবে উৎসব মুখর।

এবারের ঈদের ছুটিতে যারা ঢাকায় থাকছেন তাদেরকে ঘিরে নানা আয়োজন নিয়ে তৈরি হয়েছে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো। ঈদের দিন থেকেই এসব বিনোদনকেন্দ্রে সব বয়সের মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মানুষের কাছে ঈদ বরাবরই বাড়তি আনন্দের। আর ঈদকে ঘিরেই শিশুদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে শিশু পার্ক। তবে পার্কের প্রায় সব রাইডের বয়স প্রায় চার দশক হতে চলেছে। যা ১৪ বছর অতিক্রম হওয়ার পর বদলানোর নিয়ম। কিন্তু আজও তা হয়ে উঠেনি।

এদিকে শিশু পার্ক নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এবারের বাজেটে শিশু পার্কের জন্য দেয়া বরাদ্দ পাওয়ার পর কেনা হতে পারে ১৪টি রাইডের জন্য নতুন মেশিন। কবে নাগাদ কেনা হবে তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও তারা বলছেন চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটেই সম্ভব হবে।

shishupark-2

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শিখা চিরন্তনসহ ওই এলাকা শিশু পার্কের আওতায় আসার কথা রয়েছে। মাহান স্বাধীনতার এই প্রতীক শিখা চিরন্তন এলাকা ও শাহবাগ থানার বর্তমান কন্ট্রোলরুম যদি শিশু পার্কের অধীনে চলে আসে তা হলে পার্কের পরিসর বাড়বে এবং নতুন প্রজন্ম ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে পারবে ভালোভাবে। সঙ্গে সঙ্গে পার্কটি সুষ্ঠুভাবে পারিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে সরকারের জন্য।

ঈদের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ঈদের দিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শিশু পার্ক। প্রবেশ মূল্য ১৫ টাকা। এছাড়া রাইডগুলোর জন্য ১০ থেকে ১৫ টাকা টিকিটের দাম রাখা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মোট ৬ দিন বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সারা বছর শিশু পার্কে তেমন একটা ভিড় না থাকলেও ঈদের সময় ব্যাপকহারে চাপ বেড়ে যায়। এজন্য শিশু পার্কে নিরাপত্তাও বাড়ানো হবে। কেননা নিরাপত্তা ছাড়া কোনোভাবেই ঈদের সময় নিজেদের নিরাপত্তা প্রহরী দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য ঈদের সময় পুলিশসহ র‌্যাবের সদস্যরাও থাকবেন। এরই মধ্যে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ চেয়ে ডিএমপি কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গায় গড়ে ওঠা পার্কটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

১৯৭৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো মেশিন বদলানো হয়নি। ১৪ বছরের চলার উপযোগী মেশিনগুলো চলছে প্রায় ৩৮ বছর যাবৎ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিশু পার্কের কর্মচারীরা। তারা বলেছেন, আমাদের ভাগ্য ভালো যে ১৪ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া একটি মেশিন চলছে ৩৮ বছর। গত ৮/১০ বছর ধরে নতুন করে মেশিন কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা আর হয়ে উঠছে না।

shishupark-3

শাহবাগ শিশু পার্কে গিয়ে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা হয়েছে। উপ-সহকারী প্রকশৌলী মো. জাকির হোসেন বলেন, আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। এর পরও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি বিনোদন কেন্দ্রকে সাজিয়ে আগত দর্শনার্থীদের বিনোদন দিতে। আমাদের শিশু পার্কে কমপক্ষে ৯০ জন লোক প্রয়োজন, আছে ৬৫ জন। আমরা কম লোকবল নিয়েই প্রস্তুত রয়েছি।

বরাবরের মতো শাহবাগের শিশু পার্ক ছাড়াও জাতীয় জাদুঘর, লালবাগ কেল্লা, মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশাপাশি শ্যামলীর শিশু মেলা (ডিএনসিসি ওয়ান্ডার ল্যান্ড পার্ক), গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষের ঢল নামার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর উন্মুক্ত উদ্যানগুলোসহ হাতিরঝিল, ধানমন্ডি লেক, সংসদ ভবন এলাকা ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

এফএইচ/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।