ট্রেন বিলম্বে ভোগান্তিতে বিমানবন্দর স্টেশনের যাত্রীরা
নাড়ির টানে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোরে স্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকলেও অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না তাদের। প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে পৌঁছতে এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হচ্ছে। ট্রেন বিলম্বে আসায় এবং ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে ট্রেনের সিডিউল কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
আবুল আলী নামের একজন টঙ্গি থেকে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে এসেছেন রাজশাহী যাবেন। নীল সাগর ট্রেনের টিকিট নিয়েছেন তিনি। সকাল পৌনে ৯টায় বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থেকে ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পরিবার নিয়ে বসে আছেন। কখন ট্রেন আসবে তাও জানেন না।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বাড়িতে গিয়ে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করব, তাই বাড়ি যাচ্ছি। ট্রেন ধরতে পরিবারের সকলকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু দুই ঘণ্টা ধরে স্টেশনে বসে আছি, ট্রেনের খবর নেই। ট্রেন আসার বিষয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে কয়েকবার জানতে চাইলে সেও কিছু বলতে পারছেন না।
বিমানবন্দর রেল স্টেশনে পরিবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ী হাফিজ। রংপুর এক্সপ্রেসে দিয়ে বগুড়া যাবেন তিনি। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে স্টেশনে আসলেও ট্রেন আসার সঠিক তথ্য জানেন না। হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, নিরাপদে বাড়ি ফিরব বলে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু এক ঘণ্টা হয়ে গেলেও ট্রেন আসার খবর নেই।
বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেন বিলম্বের কারণে যাত্রীদের ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। মূলত ট্রেন বিলম্বে আসায় ভিড় আরও তীব্র হয়েছে। কোন গন্তব্যের ট্রেন আসলেও তাতে উপচেপড়া ভিড়। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ছাদে উঠছেন। ঘরে ফেরাই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
বিমানবন্দর রেল স্টেশন মাস্টার আবুল আলী জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে ৮টি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। তার মধ্যে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ধূমকেতু ট্রেন সাড়ে ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট, কিশোরগঞ্জের ১১ সিন্দু ৩০ মিনিট, খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৪৫ মিনিট, জামালপুরের তিস্তা এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা ও চট্টগ্রামের মহানগর এক্সপ্রেস ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে গেছে।
বিলম্বের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়, ইঞ্জিল ফ্রেসকরণ ও ঢাকা থেকে (কমলাপুর) ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হওয়ায় এখানেও (বিমানবন্দর) বিলম্ব হচ্ছে। তবে সকলকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সেটিকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।
ছাদে ওঠার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, পরিবারের সঙ্গে সকলে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ছাদে উঠছেন। বিষয়টি মানবিক কারণে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকেও বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন বিলম্বে ছাড়া হয়েছে। তার মূল কারণ ট্রেন বিলম্বে আসা এবং অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে ৭টা ২৫ মিনিটে।
এছাড়া ধূমকেতু এক্সপ্রেসেও নির্ধারিত সময়ের পরে ছেড়ে গেছে। সকাল ৮টার নীলসাগর এক্সপ্রেস বিলম্বিত হয়ে কমলাপুর ছেড়েছে ১১টা ২৫ মিনিটে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়ে যায় ১০টা ১৫ মিনিটে। ১০টার পরিবর্তে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ছেড়ে গেছে সাড়ে ১০ টায়, লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেন সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখনও (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায়নি।
এমএইচএম/আরএস/আরআইপি