স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি
কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষ আর মানুষ। ব্যাগ, লাগেজ হাতে নিয়ে সবাই ছুটছে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দিকে। এ তো ছিল ঘরমুখো মানুষের প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ছুটে চলার দৃশ্য। আর ট্রেনের ভেতরের চিত্র তো আরও ভিন্ন রকম।
৫ নম্বর প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ালো চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস। ট্রেনের ভেতরে তো পা ফেলার জায়গাই নেই। যারা ভাগ্যবান তারা ইতোমধ্যে তাদের নির্দিষ্ট আসনে বসতে পেরেছেন। আর যারা ভিড়ের কারণে সিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি, তারাও দাঁড়িয়েছিলেন সিট না পাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে। সবমিলিয়ে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়ে ট্রেনের ভেতরে যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এখানেই শেষ নয়, জানালা দিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের ট্রেনের ভেতরে ঢোকানোর দৃশ্য ছিল প্রায় বগির জানালাতেই। এটা শুধু ট্রেনের ভেতরের অংশের দৃশ্য। আর ট্রেনের ছাদের পুরোটাজুড়েই মানুষ আর মানুষ। যে যেভাবে পারছেন ট্রেনের ছাদে উঠে পড়ছেন। কারণ ঈদ উদযাপনে তো বাড়ি যেতেই হবে।
কিছুক্ষণ পর ৩ নম্বর প্লাটফর্মে এসে দাঁড়ালো উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস। নিমিষেই নীলসাগর এক্সপ্রেসের মতো যাত্রীতে ঠাসাঠাসি হয়ে গেল পুরো ট্রেন। যদিও তখন ৪ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়ানো ঈদ স্পেশাল দেওয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস, ২ নম্বরে দাঁড়ানো কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে সেই তুলনায় যাত্রীর চাপ ছিল কম। গত ৪ জুন যারা কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাই আজ কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন। অগ্রিম টিকিট বিক্রি অনুযায়ী চতুর্থ দিনের মতো আজ কমলাপুর ছাড়ছেন মানুষ।
অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত হাজারও বিড়ম্বনা যেন পিছু ছাড়ে না ঘরমুখো লাখো মানুষের। তবুও স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতা আর উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে যে ঘরে ফেরার আনন্দ তাদের কতটা। ঈদ মানে ঘরে ফেরার উৎসব। দৈনন্দিন ব্যস্ততা ভুলে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফিরছেন সবাই। আর এই বাড়ি ফেরাতেই যেন সব আনন্দ তাদের। শত বিড়ম্বনা, ভোগান্তি উপেক্ষা করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন তারা। কমলাপুর স্টেশনে এসব ঘরে ফেরা মানুষের মধ্যে অনেকেই গুনগুনিয়ে সুর মেলাচ্ছিলেন 'স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার'....।
নীল সাগর এক্সপ্রেসে যাত্রীর চাপ এতটাই যে ট্রেনের গেট দিয়ে ভেতরে ওঠার আর কোনো সুযোগ নাই। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে জানালা দিয়ে ট্রেনের ভেতরে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ১৪/১৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আজকের টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু আজ স্টেশনে এসে দেখি ট্রেনে এতই ভিড় যে আসন পর্যন্ত যাওয়া তো দূরের কথা ভেতরে ঢোকাই অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে জানালা দিয়ে ট্রেনের ভেতরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
সিদ্দিকুর রহমান নামের আরেক যাত্রী ট্রেনের ভেতরে উঠতে না পেরে চড়ে বসেছেন ছাদে। তখন ট্রেনের ছাদজুড়েই মানুষ আর মানুষ। তিনি বলেন, স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছি, কিন্তু ট্রেনের ভেতরে এতই যাত্রী যে উঠার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই ট্রেনের ছাদে উঠেই বাড়ি পৌঁছানোর চেষ্টা। কারণ বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই এসব কষ্ট-ভোগান্তির কথা আর মনে থাকবে না।
ট্রেনের ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী উঠার বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এএসআই তন্ময় আহমেদ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যেন ছাদে যাত্রীরা না ওঠে। তারপরও ট্রেন কমলাপুর আসার আগে এয়ারপোর্ট স্টেশনে এসব যাত্রী ছাদে উঠে পড়েছে। শুধু কমলাপুরের যাত্রী হলে আমরা নামিয়ে ফেলতে পারতাম কিন্তু এত যাত্রী যে চেষ্টা করেও তাদের নামানো যাচ্ছে না।
এদিকে ঈদ যাত্রা বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদ যাত্রায় আমরা চেষ্টা করছি যেন সব ট্রেনই ঠিকমতো এসে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। যাত্রী চাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি লাগানোর পাশাপাশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও আছে।
এএস/ওআর/এমএস