‘নির্ধারিত’র দোহাই দিয়ে লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে আগামী ১৬ বা ১৭ জুন। এ উপলক্ষে নৌপথে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। এ জন্য সদরঘাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে ঈদ সামনে রেখে নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে লঞ্চের টিকিটে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৩টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চে কেবিনের ক্ষেত্রে সাধারণত অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়। গত ৮ জুন থেকে দেয়া হচ্ছে কেবিনের অগ্রিম টিকিট।
বছরের অন্য সময় একজনের (সিঙ্গেল) কেবিন ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হয়। মঙ্গলবার দেখা গেল, নেয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। দুজনের (ডাবল) কেবিন দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
যাত্রীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া এক ধরনের প্রহসন। তারা প্রশ্ন রাখেন- বছরের অন্যান্য সময় লঞ্চ মালিকরা কম ভাড়া নিয়ে লাভ করতে পারলে ঈদের সময় কেন পারবেন না।
লঞ্চের সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে কেবিনের ভাড়া ডেকের (তৃতীয় শ্রেণি) ভাড়ার চার, তিন, দুই ও দেড়গুণ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু সব লঞ্চ মালিকই ডেকের ভাড়ার চারগুণ ধরে কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করেছেন।
অনেকে অগ্রিম টিকিট কিনতেও টার্মিনালে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছবিটি তোলা
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাট বন্দরের যুগ্ম-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) আলমগীর কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেলে আমরা লঞ্চ মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এ জন্য আমাদের তদারকি দল কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদে এখনও যাত্রীরা সেভাবে লঞ্চে ঘরে ফিরতে শুরু করেনি। আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভিড় চূড়ান্ত আকার ধারণ করবে বলে মনে করছি। আমরা নিরাপত্তাসহ সব বিষয়ে সতর্ক আছি।’
মঙ্গলবার সদরঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি লঞ্চ অগ্রিম কেবিনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। ঢাকা-নাজিরপুর-ঘোষেরহাট-লেতরা (ভোলার) রুটে চলাচল করে কর্ণফুলী-১৪ লঞ্চ। এ লঞ্চের কেবিনের দায়িত্বে থাকা মো. রিপন বলেন, ‘ঈদের আগে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া এক হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে।’
বছরের অন্যান্য সময় সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৮০০ আর ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার টাকা রাখা হয় বলেও জানান তিনি। আর এই রুটে এখন ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, অন্যান্য সময় এই ভাড়া থাকে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা।
পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ডাবল কেবিনের টিকিট নিলাম। এক মাস আগে আমি পনেরশ’ টাকায় গেছি। লঞ্চ মালিকরা সরকারকে ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে একটি ভাড়ার তালিকা করিয়ে নিয়েছেন। সময়মতো এটা তারা ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত ভাড়া অনেক সাধারণ যাত্রীর ঈদযাত্রার দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়।’
লঞ্চ টার্মিনালের ভিআইপি গেটের সামনে সতর্ক অবস্থানে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। মঙ্গলবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছবিটি তোলা
সদরঘাটে সুন্দরবন-১১ লঞ্চের কেবিন বুকিং নিচ্ছিলেন সিরাজ উদ্দিন। লঞ্চপি ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে। সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘সিঙ্গেল এসি কেবিন এক হাজার ২০০ ও ননএসি এক হাজার টাকা। ডাবল এসি কেবিন ২ হাজার ২০০ ও ননএসি ২ হাজার টাকা।’
ঈদ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে এই ভাড়া ২০০ টাকা করে কম থাকে বলেও জানান তিনি। ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে ডেকের ভাড়া এখন ২৫০ টাকা হলেও অন্যান্য সময়ে এই ভাড়া ২০০ টাকা থাকে।
ঢাকা থেকে বগা (পটুয়াখালীর একটি স্টেশন) যেতে ১৪ বা ১৫ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট নেয়ার জন্য মঙ্গলবার সদরঘাট আসেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে ঘাটে এসে দেখি আমার রুটের লঞ্চ নদীর মাঝখানে নোঙর করে আছে। এদের কোনো কাউন্টার নেই, যেখান থেকে গিয়ে টিকিট নেব। নৌকা নিয়ে যে লঞ্চে যাবো তা ঝুঁকি।’
বাড়তি ভাড়ার নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতার কারণে সারাবছর অনেক লঞ্চ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেয়। এ ছাড়া ঈদের সময় একমুখী যাত্রী পরিবহন করতে হয়। তাই পোষাতে ভাড়া খানিকটা বাড়লেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়া হয় না।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে কি-না তা তদারকি করি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’
আরএমএম/জেডএ/জেআইএম