বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী : শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু
ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এমনকি এই ডেঙ্গু রোগে গত বছর কারো মৃত্যু না হলেও সম্প্রতি রাজধানীতে দুইজনের মৃত্যুর নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার (ডিএইচএফ) এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আবু সাইদ (৪৪) নামের এক ব্যক্তি।
তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার শখীপুর থানার তারাবুনিয়া গ্রামে। তিনি গত ১৪ জুন জ্বর নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুন তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ৩১ জুন ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডেঙ্গু শকড্ সিনড্রোম ফিভার (ডিএসএফ) এ আক্রান্ত হয়ে সায়েবা তাসরিন (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সেল ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ দু’জনের মৃত্যুর খবর সোমবার বিকেলে নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আবু সাইদ গত ২০ জুন ও সায়েবা তাসরিন ৩১ জুন মারা যান। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে তারা দু’জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হন। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরে তথ্য পাঠাতে দেরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে ২২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩১ জন। এর মধ্যে মিটফোর্ডে ১ জন, হলি ফ্যামিলিতে ১ জন, ইবনে সিনায় ৬ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৮ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৯ জন, ইউনাইটেডে ২ জন ও অ্যাপোলোতে ৪ জন ভর্তি রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডা. আয়েশা আক্তার জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৭ জন। জুন মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২৫ জন থাকলেও গত একমাসে দুই শতাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর পরিচালক ড. মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। গত বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়েনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রজনন মৌসুম চলছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন অপরিষ্কার পানি জমে না থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বৃষ্টির পর সিটি কর্পোরেশন মশক নিধন কার্যক্রম ভালভাবে চালালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এক সময় ডেঙ্গুতে কেউ আক্রান্ত হলে গোটা পরিবার এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিতো। কিন্তু এখন চিকিৎসকরা খুব সহজেই ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত ও সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সারিয়ে তুলতে পারেন।
ডেঙ্গুতে কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে বিশ্রামে রাখা, বেশি বেশি পানি ও শরবত পান করার পাশাপাশি রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কত তা পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজধানীতে শত শত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। বারবার তাগাদা দিয়েও তাদের সবার কাছ থেকে ডেঙ্গু বা অন্য কোনো রোগের সঠিক তথ্য সময়মতো পাওয়া যায় না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে (জানুয়ারি ২০০০-২০১৫ জুন) দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ২৮৬৯৭ জন। এদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৪৪ জনের।
চিত্রে ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিম্নরূপ :
# রাজধানীতে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ
এমইউ/এসএইচএস/একে/এমআরআই