ছাত্রলীগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চান সোহাগ
যাদের কারণে ছাত্রলীগের বদনাম হয় তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চান সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। ছাত্রলীগকে পরিচ্ছন্ন করার পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আন্দোলন সংগ্রামে অতীতের মতো সামনের সারি থেকেই ছাত্রলীগ দেশের কল্যাণে কাজ করবে বলেও জানান সোহাগ।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের নব-নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় নব-নির্বাচিত এ সভাপতি তার এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মোহাম্মদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মুনির হোসাইন।
জাগোনিউজ২৪ডটকম এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
জাগো নিউজ : ছাত্রলীগের মতো একটি বড় সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন, আপনার অনুভূতি কি?
সাইফুর রহমান সোহাগ : অনুভূতি বলতে অনেক বড় দায়িত্ব। প্রথম কথা হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আগের মতো আর সাধারণ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই, এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তাই আমি চাইবো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদান করে।
জাগো নিউজ : ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর আপনি কি ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : পরিকল্পনা বলতে বর্তমানে আমরা আগস্ট মাস নিয়ে কাজ করছি। শোকের এই মাসে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পাগুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো।
জাগো নিউজ : ছাত্রলীগের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটটা কি ছিল?
সাইফুর রহমান সোহাগ : স্কুলে পড়াশোনাকালীন আমার নানা, বাবা, চাচা কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সম্পর্কে শুনতাম। ছাত্রলীগ সম্পর্কে তারা বিভিন্ন বর্ণনা দিতেন। তখন থেকে আস্তে আস্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করলাম। এরপর থেকে মিছিল মিটিংয়ে নিজেকে জড়িয়েছি। আমার প্রথম পোস্ট কিন্তু মাদারীপুর সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজে। সেখানকার কমিটির আমি সদস্য ছিলাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আজকের এই পর্যায়ে।
জাগো নিউজ : বর্তমান ছাত্র সমাজের উন্নয়নের জন্যে ছাত্রলীগ কিভাবে কাজ করবে?
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্রসমাজের উন্নয়নের জন্যে ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সাল থেকে কাজ করছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল ভাষা আন্দোলনকে সামনে রেখেই। সে ভাষা আন্দোলনের আভাস ছিল ১৯৪৭ সাল থেকে। সে সময় বঙ্গবন্ধু চিন্তা করেছেন ছাত্রসমাজকে একত্র করতে পারলে উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সহজ হবে। তাই তিনি আজকের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজও ছাত্রলীগ ছাত্র সমাজের উন্নয়নে নানা কাজ করে আসছে।
জাগো নিউজ : ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সবাই কথা বলে; এই নির্বাচন হওয়া উচিত। এটি না হওয়ার পেছনে মূল প্রতিবন্ধকতাটা কি বলে মনে করেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : আমিও চাই ডাকসু নির্বাচন হোক। কেন হচ্ছে না সেটা আমি জানি না। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হবে এবং এর জন্যে আমি কাজ করে যাব।
জাগো নিউজ : ২০২১ সালে আপনি কেমন ছাত্রলীগ দেখতে চান?
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্রলীগকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে রকম স্বপ্ন দেখেছিলেন ঠিক সে রকম ছাত্রলীগ দেখতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করার মাধ্যমে একটা সু-শৃংখল এবং ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এ রকম ছাত্রলীগ দেখার প্রত্যাশা করছি।
জাগো নিউজ : সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিসহ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় ছাত্রলীগকে সু-সংগঠিত করতে এবং তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আপনার কি কি পরিকল্পনা রয়েছে?
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্রলীগের যে ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়েছে তা নয়। ছাত্রলীগ কিন্তু বরাবরই সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে, দেশের পক্ষে। ১৯৪৮ সাল থেকে এইভাবে ছিল এখনো আছে এবং সামনেও থাকবে। তবে যেসব কারণে ছাত্রলীগের ইমেজ নষ্ট হয় সেসব কাজ থেকে সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবো।
জাগো নিউজ : ছাত্রলীগকে পরিচ্ছন্ন করতে আপনার কি কি পরিকল্পনা রয়েছে?
সাইফুর রহমান সোহাগ : আমি মনে করি ছাত্রলীগ এখনো পরিচ্ছন্ন। আর ছাত্রলীগকে এর চেয়ে পরিচ্ছন্ন করতে হলে যা যা করার দরকার আমরা তা তা করতে প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে যারা লালিত পালিত হয়েছে তারা কখনো কোন খারাপ কাজ করতে পারে না।
জাগো নিউজ : আপনি যেটা বলছেন, ছাত্রলীগ আগেও পরিচ্ছন্ন ছিল, এখনো রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ভিন্ন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে জায়গাগুলো পরিশুদ্ধ করে আপনি কিভাবে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান?
সাইফুর রহমান সোহাগ : যারা ছাত্রলীগ করতে ইচ্ছুক, আমরা তাদের পিছনের ইতিহাস দেখবো। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে সেখান থেকে তার চারিত্রিক সনদপত্র দেখবো। তারপর তাকে আমরা ছাত্রলীগে যোগদান করাবো।
জাগো নিউজ : যাদের কারণে ছাত্রলীগের বদনাম হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান কি হবে?
সাইফুর রহমান সোহাগ : যারা ছাত্রলীগ করার মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম করবে, তাদের ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেয়া হবে না। আমরা তদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে সংগঠনকে পরিচ্ছন্ন রাখাবো।
জাগো নিউজ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : যারা ছাত্র তারাই তো ক্যাম্পাসে থাকবে। অবশ্যই তাদের ছাত্র হতে হবে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, যারা প্রকৃত ছাত্র তারাই ছাত্র রাজনীতি করবে। আমি নিজেও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অধ্যয়ন করছি। ছাত্র না হলে কিভাবে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করবে? ছাত্র না হলে আমি কি কাউকে পরামর্শ দিতে পারি?
জাগো নিউজ : অভিযোগ রয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অছাত্ররা রয়েছে, পরবর্তী কাউন্সিলে তাদেরকে রাখা হবে কিনা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : বিভিন্ন ইউনিটে যারা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের অবশ্যই নিয়মিত ছাত্র হতে হবে। এমনকি তাদের বয়স থাকতে হবে ২৯ বছরের মধ্যে। এটি হচ্ছে আমাদের গঠনতন্ত্রের নিয়ম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এভাবেই আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জাগো নিউজ : আপনাকে যদি ছাত্রলীগ সম্পর্কে সমলোচনা করতে বলা হয়, তাহলে আপনি কোন খারাপ দিকটির বিষয়ে সমালোচনা করবেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্রলীগে খারাপ কোনো বিষয় রয়েছে বলে আমার মনে হয় না। তবে কেউ যদি খারাপ কোনো বিষয় সংশোধন করার পরামর্শ দেন তাহলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো।
জাগো নিউজ : পূর্ণাঙ্গ কমিটি কখন দিচ্ছেন?
সাইফুর রহমান সোহাগ : পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমরা আগস্ট মাসের মধ্যে তৈরি করবো এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা প্রকাশ করবো।
জাগো নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং হল কমিটি দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন কিনা?
সাইফুর রহমান সোহাগ : কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটিগুলো দেয়া হবে।
জাগো নিউজ : অন্যান্য ছাত্রসংগঠন নিয়ে আপনাদের অবস্থান কি?
সাইফুর রহমান সোহাগ : ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রশিবির হচ্ছে অবৈধ সংগঠন। আমি মনে করি গণমাধ্যমের কর্মীদেরও তাদের বিরুদ্ধে থাকা উচিত। তারা রাজনীতি করার কোনো সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশে যত অপরাধ কর্ম হয়ে থাকে তা ছাত্রশিবির করে। আর ছাত্রদলের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান হলো যে, তারা প্রকৃত এবং নিয়মিত ছাত্র হতে হবে। অন্যদিকে তাদের রাজনীতি করতে হলে শিবির এবং জামায়াতকে ত্যাগ করতে হবে।
জাগো নিউজ : আপনাদের কমিটিকে অনেকে সিন্ডিকেট কমিটি বলছে?
সাইফুর রহমান সোহাগ : এ বিষয়ে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগে কোনো সিন্ডিকেট নেই। যত ব্যাখ্যা চান আপনাদের আমি এখন থেকে বসে সারা দিন-রাত দিতে পারবো। যত প্রমাণ চান এ ব্যাপারেও আমি আপনাকে দিতে রাজি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একমাত্র সিন্ডিকেট জননেত্রী শেখ হাসিনা।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফুর রহমান সোহাগ : আপনাদেরকে ও জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
এমএম/এমএইচ/এসএইচএস/আরএস