ঘাতক ট্রাকে শিশুর প্রাণ, খালি কোলে ফিরছেন মা

সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ০৬ জুন ২০১৮
মৃত শিশুর চাচা টোটন মিয়া

‘সকালটা অামার জীবনে এভাবে অাসবে কল্পনাও করিনি। ঢাকায় অাসার সময় বুকে জড়িয়ে অানছিলাম অামার মানিক হৃদয়কে। সারাক্ষণ কোলে রাখতাম পোলাটারে। কিন্তু ট্রাকটা এটা কী করল ভাই। অামারে নিঃস্ব করে দিলো। যে কোলে করে পোলাটারে অানছিলাম, হেরে ছাড়াই এহন অামি খালি কোল নিয়াই বাড়ি যাচ্ছি। এ দুঃখ কারে বলবো ভাই। মা হিসেবে কেমনে মাইনা নিমু এ দুঃখ।’

এক বছর বয়সী শিশু হৃদয়কে হারিয়ে শোকার্ত মা মৌসুমি অাক্তার এভাবেই অশ্রুজলে অার্তনাত করছিলেন। শিশু হৃদয় হোসেন তার প্রথম সন্তান। কোলের শিশুটিকে নিয়ে ১৫ দিন অাগে যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকায় বোন বেদেনা অাক্তারের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। বেড়ানো শেষে আজ বুধবার শিশুটিকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার মদন থানার মাকনায় যাচ্ছিলেন।

সকাল ৭টার দিকে ভৈরবের গাড়িতে উঠার জন্য সাইনবোর্ড এলাকায় রাস্তার দক্ষিণ পাশ থেকে উত্তর পাশে যান মৌসুমি অাক্তার। এ সময় শিশুটিকে কোলে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন মৌসুমি। সঙ্গে শিশুটির চাচা টোটন মিয়াও ছিলেন। এ সময় যাত্রাবাড়ী থেকে একটি দ্রুতগতির ট্রাক এসে মৌসুমিকে ধাক্কা দেয়। এতে তার কোলে থাকা শিশু হৃদয় রাস্তায় পড়ে যায়। শিশুটির মাথার পেছনের অংশ থেঁতলে যায়।

ঘটনার সময় লোকজন না থাকায় ঘাতক ট্রাকটি দ্রত পালিয়ে যায়। পরে তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে অাসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু হৃদয়কে মৃত ঘোষণা করেন। শিশুটির মাকে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মিরপুরের একটি দন্ত ক্লিনিকে রেফার করা হয়। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

শিশুর মৃত্যুর খবর শুনে ঢামেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন হৃদয়ের মা মৌসুমি। তিনি অশ্রুজলে অার্তনাত করতে করতে বলেন, কোলের মানিক ছাড়া অামি কীভাবে এখন গ্রামে যাবো। ওর বাবাকে কী বুঝ দেবো! অামার একমাত্র সম্বলটা কাইড়া নিলো ট্রাকটা। এর কোনো বিচার নাই? কে করবো এই বিচার।

dmc

তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বিয়ের তিন বছর পর শিশু হৃদয়ের জন্ম হয়। অসহায় পরিবার দুঃখ-দুর্দশার মাঝে সুখ খুঁজে পেত শিশু হৃদয়ের মাঝে। ঠিক যেন তার জন্মের পর তাদের সংসারে সুখের হাসি ফুটেছিল। সেই সঙ্গে শিশুটিকে ঘিরেই তার কৃষক বাবা মহিবুরের অনেক স্বপ্ন ছিল। তাকে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষক বানানোর স্বপ্ন ছিল পরিবারের সবার।

শিশুটির চাচা টোটন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তাদের নিয়ে অামি গ্রামে যাচ্ছিলাম। অামরা যখন রাস্তা পার হচ্ছি তখন ট্রাকটি অনেক দূরে ছিল। তাই অামরা রাস্তা পার হয়ে যাই। কিন্তু রাস্তা পার হয়ে অামরা বাম পাশে দাঁড়ানো ছিলাম। তবুও ওই ট্রাকটি দ্রুতগতিতে এসে অামার ভাবিকে ধাক্কা দেয়। এ কারণে তার কোলে থাকা শিশুটি রাস্তায় পড়ে যায়। রাস্তায় পড়ে তার মাথার পেছনের অংশ থেঁতলে যায়। পরে তাকে ও তার মাকে হাসপাতালে নিলে হৃদয় মারা গেছে বলে জানায় ডাক্তাররা।

অাহত মৌসুমির বোন বেদেনা অাক্তার জাগো নিউজকে বলেন, তাকে (মৌসুমি) মিরপুর ১২ নম্বরের একটি দাঁতের ক্লিনিক থেকে এখন অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহ নিয়ে যাচ্ছি। সেখানে তার বাকি চিকিৎসা করানো হবে।

তিনি জানান, তার বোন বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। শুধু কোলের শিশুকে খুঁজছেন। সে শুধু বারবার বলছে, অাসার সময় কোলে করে শিশুটারে অানছে, এখন খালি কোল নিয়ে কেমনে যাব?

যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তবে শিশুটির স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যাওয়ার জন্য থানায় অাবেদন করেছে। সেটি বিবেচনা করা হচ্ছে এখন। অার তার মাকে চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহে নেয়া হচ্ছে বলে জেনেছি।

এসএইচ/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।